সাবুদানা খাওয়ার ১৫টি গুরুত্বপূর্ন উপকারিতা - সাবুদানা খাওয়ার নিয়ম
সাবুদানা খাওয়ার উপকারিতা ও সাবুদানা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানা আমাদের জন্য খুবই জরুরী। কেননা সাবুদানাতে অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে এবং অনেক উপকারিতা রয়েছে যে আমরা অনেকেই জানিনা। আমি আজকে আপনাকে সাবুদানা খাওয়ার ১৫টি উপকারিতা সম্পর্কে জানাবো যা আমাদের জানা খুবই জরুরী।
আজকে আমরা এই আর্টিকেলে সাবুদানা খাওয়ার উপকারিতা, সাবুদানা খাওয়ার নিয়ম এবং সাবুদানা সম্পর্কিত আরো বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো। তাই চলুন বেশি দেরি না করে শুরু করা যাক আজকের আলোচনা।
পেইজ সূচিপত্রঃ সাবুদানা খাওয়ার উপকারিতা - সাবুদানা খাওয়ার নিয়ম
সাবুদানার পুষ্টিগুণ
সাবুদানা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানার পূর্বে আমাদের জেনে রাখা উচিত সাবুদানার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। সাবুদানাতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট রয়েছে এবং ভিটামিন, ফ্যাট, শর্করা, প্রোটিন আরো অনেক পুষ্টি উপাদান এতে বিদ্যমান। নিচে আমরা একটি তালিকা তুলে ধরছি যার মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন সাবুদানাতে কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে।
প্রতি ১০০ গ্রাম সাবুদানাতে যেসব পুষ্টিগুণ রয়েছেঃ
- পানি= ১১ গ্রাম
- এনার্জি= ৩৫৮ কিলো ক্যালরি
- প্রোটিন= ০.১৯ গ্রাম
- আস= ০.১১ গ্রাম
- ফ্যাট= ০.০২ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট= ৮৮.৭ গ্রাম
- ফাইবার= ০.৯ গ্রাম
- চিনি= ৩.৩৫ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম= ২০ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম= ১১ মিলিগ্রাম
উপরে বর্ণিত পুষ্টি উপাদান ছাড়াও আরো অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। তবে সেগুলো কম পরিমাণে রয়েছে যেমনঃ আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, জিংক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, থায়ামিন, ভিটামিন বি ৬, ফলেট ইত্যাদি আরো অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে তবে সেগুলো এক গ্রাম এর নিচে।
সাবুদানা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
সাবুদানা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানার পূর্বে আমাদের জানতে হবে সাবুদানা আসলে কি। এটা কি কোন ফল? আসলে সাবুদানা কোন ফল নয় এটি পাম জাতীয় গাছের মূল থেকে নিষ্কাশন করে বের করা এক ধরনের সাদা দুধের মত রস। এই রস কে বের করার পর প্রথমে এটিকে শুকিয়ে নেয়া হয় এবং ময়দার মতো পাউডারের পরিণত করা হয়।
তারপর এই পাউডারকে মেশিনের দ্বারা ছোট ছোট দানায় পরিণত করা হয় যেটাকে আমরা সাবুদানা বলে থাকি। এই সাবুদানা আমাদের শরীরে প্রচুর ভূমিকা রাখে, অনেক রোগ থেকে মুক্ত রাখে এবং অনেক উপকার করে থাকে। আমি এখানে ১৫টি উপকার সম্পর্কে বলবো যেগুলো সাবুদানা আমাদের শরীরে করে থাকে। তাহলে চলুন জেনে আসি সেই উপকারিতা গুলো।
এক নজরে ১৫ টি সাবুদানার উপকারিতাঃ
- গ্লুটেন মুক্ত খাদ্য
- মুখের স্বাদ ফেরায়
- ক্যান্সার প্রতিরোধে
- হাড়ের সুস্বাস্থ্য
- শরীরের শক্তি বৃদ্ধিতে
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
- ওজন বৃদ্ধিতে
- হজম শক্তি বৃদ্ধিতে
- ত্বকের যত্নে
- চুলের যত্নে
- গর্ভবতী নারীদের
- ঋতুস্রাবের সময়
- মাথা ব্যথা কমায়
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
- সান ট্যান দূর করতে
গ্লুটেন মুক্ত খাদ্যঃ অনেকে রয়েছেন যারা গ্লুটেন বিহীন খাদ্য খেতে পছন্দ করেন। বিশেষ করে যাদের অ্যালার্জি রয়েছে তারা গ্লুটেন মুক্ত খাবার খেতে চান। সাবুদানার মতন গ্লুটেন বিহীন খাদ্য পাওয়া মুশকিল। গ্লুটেন গম বা বার্লের মতো খাদ্যে থাকে। তাই যদি তার বিকল্প হিসেবে কোন খাদ্য খেতে চান তাহলে আপনি সাবুদানা খেতে পারেন।
মুখের স্বাদ ফেরায়ঃ আপনার মুখের রুচি যদি চলে গিয়ে থাকে অরুচি ভাব মনে হয় তাহলে আপনি সাবুদানা খেতে পারেন। কেননা জিহবাতে থাকা স্বাদকোষগুলিকে উদ্দীপ্ত করে এই সাবুদানা। ফলে যেসব রোগাক্রান্ত মানুষ রয়েছে তারা বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তির পর এই সাবুদানা খায় যাতে তাদের মুখে স্বাদ আবার ফিরে আসে।
আরো পড়ুনঃ সবুজ আঙ্গুর খাওয়ার ১০টি উপকারিতা-বেশি আঙ্গুর খেলে কি হয়
ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ ক্যান্সার প্রতিরোধে সাবুদানাতে একটি উপাদান রয়েছে যার নাম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। প্রচুর পরিমাণে ট্যানিন ও ফ্লেভানয়েড নামক দুটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর কাজ হল আপনার শরীরের ফ্রি রেডিকেল গুলি নষ্ট করে দেহ থেকে বাইরে বের করে দেয়।
আর যদি এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এই কাজ না করে তাহলে এই রেডিকেল গুলি কি করে আপনার শরীরের কোষগুলোকে নষ্ট করে ক্যান্সারের মতো রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। তাই ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি রোগ থেকে রক্ষা পেতে গেলে আপনাকে সাবুদানা খেতে হবে। তবে যদি আপনার ক্যান্সার হয়ে থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত হবে।
হাড়ের সুস্বাস্থ্যঃ আমাদের মধ্যে অনেকের হাড়জনিত সমস্যা থেকে থাকে। এই হাড় দুর্বল হওয়া আর সঠিকভাবে বৃদ্ধি না পাওয়া এগুলোর জন্য দায়ী করা হয় ক্যালসিয়াম নামক উপাদান কে। যদি আপনি ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান তাহলে আপনার এই হাড়জনিত সমস্যা দূর হবে। সাবুদানাতে ক্যালসিয়াম রয়েছে আর এই ক্যালসিয়াম আপনার হাড়জনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে থাকে।
শরীরের শক্তি বৃদ্ধিতেঃ সাবুদানা অসুস্থ ও দুর্বল রোগীদের শক্তি প্রদানে খুবই উপকারী। আপনি যদি সাবুদানা খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার শরীরের তাৎক্ষণিক শক্তি বৃদ্ধিতে এটি কাজ করবে। সাবুদানা সাধারণত সরল শর্করা জাতীয় খাদ্য এবং এতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে। এছাড়াও প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন সামান্য পরিমাণে রয়েছে।
যার কারণে আপনি এটি যদি ব্যায়াম করার আগে বা পরে খান তাহলে এটি আপনার শরীরের শক্তি জোগাতে সাহায্য করবে। আপনার শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে না। বিশেষ করে যারা শরীরের পেশী গঠনের জন্য এক্সারসাইজ করে থাকেন তাদের জন্য সাবুদানা পেশি গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেঃ উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় পৃথিবীর অনেক মানুষ জর্জরিত। আপনি যদি উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় থেকে থাকেন তাহলে আপনি সাবুদানা খেতে পারেন। কেননা সাবুদানাতে থাকা পটাশিয়াম নামক উপাদানটি আপনার স্বাস্থ্যকর রক্ত প্রবাহকে উন্নত করতে সাহায্য করে এবং আপনার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এর ফলে কি হয় আপনার হার্টের উপর চাপ কমে এবং স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায়।
ওজন বৃদ্ধিতেঃ আপনি যদি ওজন বৃদ্ধি করতে চেয়ে থাকেন তাহলে আপনি সাবুদানা খেতে পারেন। প্রতিদিন নিয়মিত ব্রেকফাস্টে দুধ ও সাবুদানা যদি খান তাহলে আপনার ওজন বৃদ্ধি হবে আশা করা যায়। কেননা সাবুদানাতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট রয়েছে আর এতে ক্যালরিও খুব বেশি পরিমাণে থাকে।
হজম শক্তি বৃদ্ধিতেঃ যাদের হজমের শক্তি ভালো না অনেক দুর্বল তারা সাবুদানা খেতে পারেন। কেননা সাবুদানা আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। সাবুদানাতে পানিতে দ্রবণীয় তন্তু রয়েছে যার নাম আস। এই আস আপনার পৌষ্টিকনালিকে পরিষ্কার রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের সমস্যা দূর করে এবং হজম শক্তি বাড়িয়ে দেয়। তাই হজম শক্তি বৃদ্ধির জন্য আপনিও সাবুদানা খেতে পারেন।
ত্বকের যত্নেঃ সাবুদানা দিয়ে আপনি চাইলে রূপচর্চা করতে পারবেন। সাবুদানার ভেষজ মাস্ক ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। আপনি যদি ফর্সা হতে চান তাহলে সাবুদানের সাথে দুধ মিশিয়ে ত্বকে লাগান দেখবেন ত্বক উজ্জ্বল হবে ও দাগ চলে যাবে। এই মাস্ক সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ব্যবহার করতে হবে।
চুলের যত্নেঃ আপনি যদি চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চান, চুলকে উজ্জ্বল এবং অকালে চুল পড়া রোধ করতে চান তাহলে সাবুদানা খান। সাবুদানাতে থাকা বিশেষ ধরনের প্রোটিন আপনার নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে, খুশকি হাত থেকে রক্ষা করবে এবং চুলের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করবে।
গর্ভবতী নারীদেরঃ বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের জন্য সাবুদানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা গর্ভবতীকালীন সময়ে নারীরা শরীরের শক্তি হারিয়ে ফেলেন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এই সকল রোগ থেকে বাঁচার জন্য সাবুদানা আপনাকে সাহায্য করতে পারে। সাবুদানাতে থাকা ভিটামিন৬ এবং ফলেট গর্ভে থাকা আপনার ভ্রুনের বিকাশ ঘটনার সহায়তা করে। তবে যদি গর্ভবতী নারীদের ডায়াবেটিস থাকে তবে এসব না খাওয়াই ভালো হবে।
ঋতুস্রাবের সময়ঃ ঋতুস্রাবের সময় মহিলারা অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে এবং অনেক ক্ষুধা বেড়ে যায় তাই আপনি যদি মাসিক শুরুর দুই তিন দিন পর সাবুদানা খান তাহলে অনেক বেশি উপকার পাবেন। প্রোষ্টাগ্লান্ডিন এর বিরুদ্ধে কাজ করে এই সাবুদানা। এই প্রোষ্টাগ্লান্ডিন মাসিকের সময় অনেক বেশি বেড়ে যায় যার ফলে পেটে ব্যথা হয়। তাই আপনি যদি এই সাবুদানা খান তাহলে পেট ব্যথা থেকে বেঁচে থাকতে পারবেন।
মাথা ব্যথা কমায়ঃ সাবুদানা খেলে আপনার মাথা ব্যথা কমাতে পারে। কেননা মাসিকের সময় প্রোজেষ্টরনের মাত্রা কমে যাওয়ার কারণে অনেক মহিলার মাথাব্যথা হয়ে থাকে। যেহেতু সাবুদানাতে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে সেহেতু ম্যাগনেসিয়াম আপনার মাথা ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে। যদি আপনি মাসিকের সময় টক দই এর সাথে সাবুদানা খান তাহলে মাথা ব্যথা সেরে যাবে আশা করা যায়।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ ইঁদুরের উপর গবেষণায় দেখা গেছে এবং ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে যে, সাবুদানা কোলেস্টরেল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমিয়ে দেয়। যার ফলে আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে থাকে। সাবুদানাতে প্রচুর পরিমাণে এমাইলজ থাকে সেহেতু আপনার হৃদরোগ সুস্থ থাকে। তাই হৃদরোগ থেকে সুস্থ ও মুক্ত পেতে চাইলে সাবুদানা খাওয়া উচিত।
সান ট্যান দূর করতেঃ সান ট্যান দূর করতে সাবুদানার গুরুত্ব অনেক। যাদের অতিরিক্ত রোদের কারণে সান ট্যান হয়ে থাকে তারা যদি সাবুদানার পেস্ট করে এর সাথে মধুও দুধ মিশিয়ে হাত ও ফেঁসে ভালো করে লাগান তাহলে অল্প কিছু দিনের মধ্যে সান ট্যান দূর হয়ে যাবে।
সাবুদানা খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন
সাবুদানা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে এখানে আমরা আলোচনা করব জানতে হলে পড়তে থাকুন। আমরা এ পর্যন্ত সাবুদানার অনেক পুষ্টিগুণ, উপকারিতা সম্পর্কে জানলাম। সাবুদানাতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে এবং এই সাবুদানা আমাদের শরীরের অনেক উপকার করে যা আমরা জানতামই না। সাবুদানা আমাদের শরীরের শক্তি যোগায়, বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি দেয়।
এইগুলো জানার পরে আমাদের জানতে হবে কিভাবে খাওয়া যায় সাবুদানা। সাবুদানা অনেক ভাবে খাওয়া যায় আপনি যে কোন পদ্ধতিতে খেতে পারেন। সাবুদানাকে আপনি সাধারণত পানি দিয়েও ভিজিয়ে রেখে তারপর খেতে পারেন অথবা কোন সবজির সাথে মিশিয়ে রান্না করতে পারেন আবার অনেকে দুধের সাথে মিশিয়েও খায়
আবার অনেকে দেখা যায় খিচুড়ি বানায় সাবুদানার। তাই আপনি চাইলে এটাও ট্রাই করে দেখতে পারেন আবার অনেকে বড়া বানায় বা ক্ষীর বানায়। আপনি যে কোন ইচ্ছা খেতে পারেন। আবার আপনি সাবুদানার জুস বানাবেন বা ডেজার্ট এ মিশিয়ে খাবেন এটা আপনার উপর।
সাবুদানা খেলে কি মোটা হয় এখনই দেখুন
সাবুদানা খেলে কি মোটা হয় এরকম অনেক মানুষের প্রশ্ন থাকে। অনেকে চিন্তায় থাকেন সাবুদানা খেলে আবার মোটা হয়ে যাব না তো আবার অনেকে ভাবে সাবুদানা খেলে আসলে কি মোটা হওয়া যায় তাহলে আমিও খাব। সাবুদানাতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। তবে ফ্যাটের পরিমাণ কম। আপনার ওজন বৃদ্ধির জন্য এটি স্বাস্থ্যকর খাবার।
যেসব মানুষ ওজন বৃদ্ধি করতে চান তাদের জন্য এটি সুখবর যে সাবুদানা খেলে আপনি ওজন বাড়াতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে নিয়মিত প্রতিদিন বেশি করে সাবুদানা খেতে হবে। কিন্তু যারা মোটা আছেন ইতিমধ্যেই তারা যদি সাবুদানা নিয়মিত খান তাহলে তাদের ক্ষেত্রে ওজন বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদি আপনি ওজন কমাতে চান তাহলে আপনাকে কম ক্যালরিযুক্ত খাবার খেতে হবে।
আরো পড়ুনঃ চাল কুমড়ার ১৫টি কার্যকরী উপকারিতা ও অপকারিতা (বিস্তারিত দেখুন)
কিন্তু সাবুদানাতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি রয়েছে। সাবুদানা খেলে আপনার পেট ভরে থাকার কথা ছিল কিন্তু এতে থাকা অতিরিক্ত চিনি আপনাকে সব সময় ক্ষুধার্ত করে তুলবে। তাই সাবুদানা যদি খান তাহলে আপনার স্বাস্থ্য উন্নতি হবে, ওজন বৃদ্ধি হবে। তাই আপনি যদি স্বাস্থ্য কমাতে চান তাহলে সাবুদানা না খাওয়াই ভালো।
আর যদি ওজন বাড়াতে চান তাহলে সাবুদানা নিয়মিত বেশি করে খান। সর্বোপরি আরো বিস্তারিত এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানার জন্য অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং সেই অনুযায়ী সাবুদানা গ্রহণ করুন।
দুধ সাবু খাওয়ার উপকারিতা জানেন কি
দুধ সব খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে যদি জানতে চেয়ে থাকেন তাহলে এই লেখাটি পড়তে থাকুন। আমি আপনাকে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করব। সাবুদানাতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট রয়েছে যার ফলে আপনার শরীরের তাৎক্ষণিক শক্তি জোগাতে এটি খুবই কার্যকরী এবং ক্লান্তি ও দুর্বলতার সমস্যা থেকে মুক্তি দিবে।
এই সাবুদানা এর সাথে যদি আপনি দুধ মিশিয়ে খান তাহলে তো এটি আরো বেশি কার্যকরী হয়ে উঠবে। এই দুধ দিয়ে সাবুদানা মিশে খেলে আপনার দুর্বলতা দূর করে দিবে এবং উচ্চ রক্তচাপের রোগী যারা আছে তাদের জন্য এটি খুবই উপকারী বলে গণ্য হবে। বর্তমান সময়ে দেখা গিয়েছে যেসব রোগীরা উচ্চ রক্তচাপ এর সমস্যায় রয়েছে
তারা দুধ সাবু দানা একসাথে মিশে খাওয়ার পরে তাদের উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা দূর হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া যদি আপনি উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যার কোন রোগী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার ক্ষেত্রে উচিত হবে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা অনুযায়ী সাবুদানা খাওয়া। অন্যথায় সাবুদানা যদি দুধ দিয়ে মিশিয়ে খান তাহলে এটি আপনার অনেক উপকার করবে।
কেননা দুধে তো এক ক্যালরি ও পুষ্টি রয়েছে তার সাথে আপনি প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি ও কার্বোহাইড্রেট যুক্ত সাবুদানা মিশাচ্ছেন। যার ফলে এটি অনেক সুস্বাদু ও অনেক শক্তি যোগাবে এবং আপনার ক্যালরির চাহিদা পূরণ করবে।
সাবুদানার পায়েস রেসিপি শিখে নিন
সাবুদানার পায়েস বানানো অনেক পদ্ধতি রয়েছে। তবে এখানে আমি আপনাকে একটি পদ্ধতি জানাবো যার দ্বারা আপনি পায়েস রেসিপি তৈরি করতে পারবেন।
যা লাগবেঃ
- সাবুদানা= ১ কাপ
- দুধ= ৩ কাপ
- কাজুবাদাম= ৭টি
- কিসমিস= ১৫ টি
- চিনি= ৩ টেবিল চামচ
- এলাচ= ৩টি
- তেজপাতা= ১টি
রান্নার প্রক্রিয়াঃ
- প্রথমে সাবুদানাকে তিন ঘন্টা মত ভিজিয়ে রাখতে হবে।
- তারপরে একটা কড়ায় দুধ গরম করতে হবে যখন ৪ কাপ দুধ ঘন হয়ে এক কাপ হবে তখন তাতে তেজপাতা কাজুবাদাম ও কিসমিস দিতে হয়।
- এরপর আপনাকে চিনি দিয়ে আরো কিছুক্ষণ নেড়ে সাবুদানা তার মধ্যে দিয়ে দিতে হবে। যখন এই রস ফুঁটিয়ে ঘন হবে তখন তাতে এলাচ থেতিয়ে দিতে হবে।
- এবার আপনাকে নামিয়ে নিতে হবে। যখন এটি ঠান্ডা হবে তখন আপনি এটি মেহমানের কাছে পরিবেশন করতে পারবেন।
এছাড়াও আপনি আরো অনেক পদ্ধতিতে পায়েস রান্না করতে পারেন। তবে এটি সহজ পদ্ধতি আপনি এক্ষেত্রে কাজুবাদাম ও কিসমিস না দিয়েও সাবুদানা পায়েস রান্না করে খেয়ে দেখতে পারেন খুবই মজাদার এবং এটি প্রচুর পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এবং অনেক উপকার করে যা আমরা উপর থেকে জেনে এসেছি। তাই উপকার পেতে চাইলে সাবুদানা পাইস রেসিপি করেও খেতে পারেন।
আসল সাবুদানা চেনার ৩টি উপায় জেনে নিন
আসল সাবুদানা চেনার উপায় জানতে যদি চান তাহলে ধৈর্য ধরুন আমি আপনাকেই জানাবো ৩টি উপায় যা দ্বারা আপনি আসল সাবুদানা চিনতে পারবেন। বাজারে বর্তমানে নকল সাবুদানা অনেক বেড়ে গিয়েছে। কেননা সাবুদানার প্রচুর দাম। সাবুদানার আসলটা পাম গাছের মূল হেকে হয় আর নকল সাবুদানা ময়দা দিয়ে বানিয়ে রাখা হয়।
কিন্তু দুই সাবুদানা দেখতে প্রায় একই রকম। মানুষ বাজারে গিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে যায় কিভাবে আসল সাবুদানা চিনবো। আমি এখানে ৩টি উপায় জানাবো যার দ্বারা আপনি আসল সাবুদানা চিনতে পারবেন। চলুন জেনে আসি সেই উপায়গুলো।
প্রথম উপায়ঃ প্রথমত আপনি সাবুদানা দেখলেই চিনতে পারবেন। সাবুদানা যদি স্বচ্ছ কাঁচের মত হয় তাহলে বুঝবেন সেটা আসল সাবুদানা। আর যদি ঘোলাটে দেখতে হয় তাহলে বুঝবেন নকল।
দ্বিতীয় উপায়ঃ দ্বিতীয় উপায় হচ্ছে দুই ধরনের সাবুদানা যদি আপনি এক ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখেন তাহলে দেখবেন আসল সাবুদানা গোটা গোটা হয়ে থাকছে এবং ফুলে দ্বিগুণ হচ্ছে আর নকল সাবুদানা দেখবেন একবারে আটার মত গলে যাচ্ছে।
তৃতীয় উপায়ঃ এই উপায় আপনাকে রান্না করে দেখতে হবে। আপনি ভালোভাবে সাবুদানা ধুয়ে একটি হাড়িতে পানি দিয়ে সাবুদানা ঢেলে জাল দিন এবং সেখানে দেখবেন সাবুদানা ফুলে দ্বিগুণ হয়ে যাবে এবং দেখতে সুন্দর লাগবে। আর অন্যদিকে নকল সাবুদানা জাল দিলে একেবারে গলে যাবে পানির সাথে মিশে যাবে।
এই ৩ পদ্ধতি যে কোন একটি পদ্ধতি অবলম্বন করে আপনি আসল এবং নফল সাবুদানা চিনতে পারবেন। এখন আপনি বাজারে গিয়ে আসুন সাবুদানা কিনে রান্না করে আপনার শিশুকে ও গর্ভবতি মাকে অথবা নিজেও খেয়ে অনেক উপকার লাভ করতে পারবেন।
শেষ কথাঃ সাবুদানা খাওয়ার উপকারিতা - সাবুদানা খাওয়ার নিয়ম
প্রাণপ্রিয় পাঠক মন্ডলী!! আশা করছি আপনি যে বিষয় সম্পর্কে জানতে এসেছিলেন তা জানতে পেরেছেন। আমরা এখানে পুরো আর্টিকেল জুড়ে সাবুদানা খাওয়ার উপকারিতা, সাবুদানা খাওয়ার নিয়ম, দুধ সাবুদানা খাওয়ার উপকারিতা, আসল সাবুদানা চেনার উপায় এবং সাবুদানার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।
এই আর্টিকেলটি পড়ার পর যদি কোন মন্তব্য বা প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে আমাদেরকে জানাতে পারেন। আমরা আপনার মন্তব্যের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। আমরা পুরো আর্টিকেলে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। যদি এই আর্টিকেলে কোন ভুল ধরা পড়ে থাকে তাহলে আমাদেরকে জানাবেন আমরা তা পরবর্তীতে সংশোধন করার চেষ্টা করব। এই আর্টিকেলটি পড়ার পর যদি মনে করেন যে আপনি উপকৃত হয়েছেন এবং অন্যদেরকে উপকৃত করতে চান তাহলে আপনি আপনার বিভিন্ন বন্ধু-বান্ধবের নিকট আর্টিকেলটি শেয়ার করতে পারেন যাতে তারা উপকৃত হতে পারে। এটাই আমাদের কাম্য।
নবান্ন আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url