খেসারি ডালের ৯টি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা ও অপকারিতা চলুন জেনে আসি

খেসারি ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই ভালোভাবে জানি না। খেসারি ডাল যে আমাদের শরীরে কত উপকার করে এবং বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত রাখে সেই সকল অপকারিতা সম্পর্কে জানা খুবই জরুরী। যদি উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে এ আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।

খেসারি ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা

কেননা আজকে আমরা এই আর্টিকেল জুড়ে আলোচনা করব খেসারি ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খেসারি ডালে কি থাকে এবং খেসারি ডালের দাম ইত্যাদি সম্পর্কে। তাই চলুন বেশি দেরি না করে শুরু করা যাক আজকের আলোচনা।

পেইজ সুচিপত্রঃ খেসারি ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা

খেসারি ডালে কি থাকে

খেসারি ডালে কি থাকে সে সম্পর্কে আমাদের সবারই জানা উচিত। এখানে আমরা এ সম্পর্কে আলোচনা করবো। খেসারি ডালে প্রচুর পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরে প্রচুর উপকার করে থাকে, বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত রাখে। নিচে আমরা খেসারী ডালের পুষ্টি উপাদানের তালিকা তুলে ধরছি।

প্রতি ১০০ গ্রাম খেসারি ডালে রয়েছেঃ

পুষ্টি উপাদান পরিমান
ক্যালোরি ৩৪৫ গ্রাম
আমিষ ২২.৯ গ্রাম
প্রোটিন ২৮ গ্রাম
ক্যালসিয়াম ৯০ মিলিগ্রাম
কার্বোহাইড্রেট ৫৬ গ্রাম
শর্করা ৫৫.৭ গ্রাম
ফাইবার ২.৩ গ্রাম
আয়রন ও ফ্যাট ০.৭ গ্রাম
ভিটামিন সি ১০ মিলিগ্রাম

উপরে দেওয়া টেবিলে যে পুষ্টি উপাদান দেখছি তা বাদেও খেসারির ডালে অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে যেমনঃ ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি৩, ভিটামিন বি৬, ফলিক এসিড, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, সেলিনিয়াম এবং আরো অন্যান্য খনিজ পদার্থ রয়েছে, তাহলে আমরা জানতে পারলাম খেসারির ডালে প্রচুর পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যার দ্বারা আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত রাখতে খেসারি ডালের ভূমিকা অপরিসীম।

খেসারি ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা

খেসারি ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে যদি বলতে হয় তাহলে বলতে হবে এই ডালের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না প্রচুর পরিমাণে উপকারিতা রয়েছে। খেসারির ডালকে গরীবের আমিষ বলা হয়ে থাকে। কেননা এটি দামে কম এবং আমিষের চাহিদা অনেক পরিমানে পূরণ করে। 

বিভিন্ন দেশে খেসারি ডালকে প্রধান খাদ্যের অংশ হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ বিভিন্ন রীতিতে খেসারির ডাল খেয়ে থাকে। অনেকে আবার খেসারি ডাল কে পশুর খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করে থাকেন।খেসারি ডাল এর উপকারিতা সম্পর্কে প্রথমে আমরা আলোচনা করব তারপরে আমরা এর অপকারিতা সম্পর্কে জানব।

খেসারির ডালের উপকারিতা কি কি সে সম্পর্কে আমরা নিচে বিস্তারিত উল্লেখ করছিঃ

রিকেট রোগেঃ রিকেট রোগ এক ধরনের হাড়জনিত রোগ। এ রোগ মূলত ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়ামের অভাবের কারণে হয়ে থাকে। এ রোগের ফলে রোগীর হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে এবং নরম হয়ে যায়। যা শিশুদের বৃদ্ধি এবং বিকাশ হতে বাধা দিয়ে থাকে। সেহেতু এ রোগ থেকে বাঁচতে হলে আপনাকে ভিটামিন ডি বা ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। 

খেসারির ডালে ভিটামিন ডি বা ক্যালসিয়াম সরাসরি পাওয়া যায় না তবে এই ডালে প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান অনেক বেশি পরিমাণে রয়েছে। তাই একটি সুষম খাদ্যাভাসের অংশ হিসেবে খেসারির ডাল আপনি খেতে পারেন। যার দরুন রিকেট রোগ থেকে আপনি বেঁচে থাকতে পারেন। রিকেট রোগ থেকে বাঁচতে হলে আপনাকে বিভিন্ন ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার 

যেমনঃ দুগ্ধজাত খাবার, ডিম, মাছ বা আপনি সূর্যের তাপ গ্রহণ করতে পারেন। সুতরাং আপনি যদি এ ক্ষেত্রে ডাল খাওয়ার পাশাপাশি এই সকল খাদ্যাভাস মেনে চলেন তাহলে রিকেট রোগ থেকে বেঁচে থাকতে পারবেন।

রক্তচাপ কমাতেঃ রক্তচাপ কমাতে খেসারির ডাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কেননা খেসারির ডাল বা কালাই ডালে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম নামক উপাদান থাকে। যা আপনার রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে থাকে। পটাশিয়াম এর কাজ হল শরীরের সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যার ফলে রক্ত চাপ কমাতে এবং হৃদ যন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহযোগিতা করে। 

তবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য শুধুই খেসারির ডাল খেতে হবে আর কিছু না খেলেও চলবে এরকম ধারণা রাখা উচিত নয়। আপনি খেসারির ডালের পাশাপাশি সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনধারার পরিবর্তন আনুন। লবণ, চিনি এবং তেল, চর্বির পরিমাণ, ফলমূল শাকসবজি বেশি খান এবং নিয়মিত শরীর চর্চা করেন। তাহলে আপনি আশা করা যায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। 

এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া খুবই জরুরী এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী বয়স অনুযায়ী খাবারের অভ্যাস এবং শরীর চর্চার মত বিষয়গুলো বিবেচনা করে একটা সুষম খাদ্যাভাস গড়ে তুলুন। যার ফলে আপনি রক্তচাপ থেকে বেঁচে থাকতে পারবেন।

কোলেস্টোরেল এর মাত্রা কমাতেঃ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর জন্য খেসারির ডাল একটি আদর্শ খাবার। কেননা খেসারির ডালে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার নামক উপাদান থাকে। যা শরীরের কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমাতে সহযোগিতা করে থাকে। ফাইবার নামক উপাদানের কাজ হল সে শরীরের কোলেস্টোরেল শোষণ কমায় এবং এলডিএল খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কম করে। 

এছাড়াও খেসারির ডালে যে ফাইবার রয়েছে সেই ফাইবার নামক উপাদানটি হজম প্রক্রিয়াকে ধীরগতি করে। যার ফলে খাদ্য থেকে চর্বি ও শর্করা শোষন কমাতে সাহায্য করে এবং এতে করে আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে কোলেস্টেরল কমানোর জন্য আপনি এটা মনে করবেন না যে শুধু ক্ষেত্রে ডাল খাওয়াই যথেষ্ট হবে। 

আপনি এর সাথে সুষম খাদ্যাভাস এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা গড়ে তুলুন এবং অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন, ফলমূল্য শাকসবজি বেশি করে খান, নিয়মিত ব্যায়াম করুন, মদ্যপান ও ধূমপান বর্জন করুন, মানসিকভাবে প্রশান্ত থাকুন, ভালো ঘুমান এসব উপায় অবলম্বন করলে আশা করা যায় আপনি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারবেন। 

এছাড়াও যদি রক্তের কোলেস্টেরল মাত্রা খুব বেশি হয়ে যায় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না। তার পরামর্শ অনুযায়ী সময়মতো ওষুধ সেবন করুন। সুতরাং আমার বুঝতে পারলাম কোলেস্টেরল কমানোর জন্য শুধু খেসারির ডাল নয় তার সাথে সাথে এসব বিষয়েও মাথায় রাখা উচিত।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খেসারি ডালের প্রচুর ভূমিকা রয়েছে। খেসারির ডালে একটি উপাদান রয়েছে যার নাম ফাইবার। এই উপাদানটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করে। যা ইনসুলিন এর প্রতিক্রিয়াকে স্থিতিশীল করে এবং রক্তে শর্করার স্পাইক এড়াতে সাহায্য করে থাকে।

এছাড়াও খেসারের ডালে কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকায় এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপযুক্ত খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে আপনি যদি মনে করে থাকেন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রে শুধু খেসারির ডাল যথেষ্ট তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। ডালের পাশাপাশি সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারার অনুসরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

আপনি যদি সঠিক খাদ্যাভাস, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করেন, ওজন নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন এবং ধূমপান বর্জন করেন তাহলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণে আপনি সক্ষম হতে পারবেন। তারপরেও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উচিত যে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের নিকট নিয়মিত পরামর্শ নেয়া এবং প্রয়োজনে ওষধ সেবন করতে থাকা।

প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ আপনি যদি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চান তাহলে সে ক্ষেত্রে খেসারির ডাল আপনাকে সাহায্য করতে পারে। এই ডালে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ থাকে যা আপনার শরীরের সার্বিক পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। 

এই খেসারির ডালে থাকা ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ আপনার শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে এবং বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে থাকে। তবে এটা মনে করবেন না যে শুধু খেসারির ডাল খেলেই আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হবে। আপনাকে বিভিন্ন ধরনের খাবার এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করতে হবে।

খেসারি ডালের উপকারিতা

আপনি যদি নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করেন, পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমান, মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকেন, সুষম খাদ্যাভাস মেইনটেইন করেন, ধূমপান বা মদ্যপান ত্যাগ করেন তাহলে আপনি ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবেন। এছাড়াও আপনাকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে থাকা উচিত এবং অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসরণ করা উচিত।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেঃ আপনার যদি বিভিন্ন ধরনের কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত সমস্যা থেকে থাকে এবং তা দূর করতে চান তাহলে খেসারির ডাল এক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করতে পারে। খেসারির ডালে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার নামক উপাদান থাকে যা আপনার কষ্টকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে থাকে। ফাইবার অন্ত্রের মধ্যে গিয়ে পানি শোষণ করে এবং মলকে নরম করে যা মলত্যাগ করতে সহজ করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য কমানোর জন্য শুধুই খেসারির ডাল খেলে চলবে না আপনাকে এর পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ, পানি নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য কমানোর জন্য আপনি ইসুবগুলের ভুষি খেতে পারেন এবং ম্যাগনেসিয়াম সম্পন্ন খাবার এবং কিসমিস খাওয়ার মত ঘরোয়া উপায় গুলো ব্যবহার করতে পারেন। যদি আপনার মনে হয় আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে এবং অন্য উপসর্গের সাথে যুক্ত হচ্ছে তাহলে আপনি অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

ওজন বাড়াতেঃ আপনার শরীরের ওজন বাড়ানোর জন্য খেসারির ডাল খুবই উপকারী। খেসারির ডাল বা কালাই প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থের একটি ভালো উৎস রয়েছে যা শরীরের ওজন বাড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খেসারির ডালে উচ্চ মাত্রায় ক্যালরি এবং প্রোটিন থাকে যা আপনার মাংসপেশীর গঠন এবং শরীরের ওজন বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। 

প্রতি 100 গ্রাম খেসারির ডালে ৩৪৫ ক্যালোরি এবং ২৮ গ্রাম প্রোটিন, ৫৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট এবং ২.৩ গ্রাম ফাইবার থাকে। তবে শরীরের ওজন বাড়ানোর জন্য শুধুই খেসারির ডাল কে সম্বল বানাবেন না। এর পাশাপাশি সুস্থ খাদ্যাভাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন। আপনি যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করেন এবং ক্যালরি গ্রহণের মাত্রা বৃদ্ধি করেন। 

তাহলে আপনি আপনার ওজন বাড়াতে সক্ষম হবেন। এছাড়াও পাশাপাশি আপনি চাইলে পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপ কমানোর প্রক্রিয়া ব্যবহার করতে পারেন। তবে আপনি যদি ভালোভাবে ওজন কমাতে চান তাহলে একজন পুষ্টিবিদ বা ফিটনেস প্রশিক্ষকের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া ভালো হবে।

মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখতেঃ আপনি যদি আপনার মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চান তাহলে ডাল খেতে পারেন। খেসারি ডালে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে যা আপনার মাড়ির স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। ক্যালসিয়ামের কাজ হল দাঁত এবং শক্তি এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। এছাড়াও থাকা আরো অন্যান্য খনিজ পদার্থ এবং ভিটামিন গুলো মাড়ির স্বাস্থ্য এবং মুখের শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহযোগিতা করে থাকে। 

তবে যদি আপনি আপনার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চান তাহলে শুধু খেসারির ডালে সীমাবদ্ধ থাকবেন না। নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার করুন এবং ফ্লশ করুন এবং নিয়মিত ডেন্টিস্টের কাছে চেকআপ করাতেও যেতে পারেন। সুষম খাদ্যাভাস এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা মেনে চললে আপনার মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সুবিধা হতে পারে। যদি সমস্যা খুব বেশি পরিমাণে হয় তাহলে একজন ডেন্টিস্টের সাথে পরামর্শ করা উচিত হবে।

ত্বক ভালো রাখতেঃ আমরা আমাদের ত্বক সম্পর্কে অনেক সচেতন হই। আমরা যদি আমাদের ত্বক কে ভালো রাখতে চাই তাহলে খেসারির ডালের এ ক্ষেত্রে আমাদেরকে সাহায্য করতে পারে। খেসারির ডাল বা কলাই ডালে প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থের মত পুষ্টিকর উপাদান থাকে যা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। 

এই ডালে থাকা পুষ্টিগুণ ত্বকের কোষগুলোকে সুস্থ রাখতে এবং ত্বকের পুনর্জন্ম এবং মেরামত করতে সাহায্য করে। খেসারির ডালে থাকা প্রোটিন ত্বকের কোষ গঠনে সাহায্য করে এবং ভিটামিন সিঃ ক্লোজেন উৎপাদনের সাহায্য করে যা আপনার ত্বককে দৃঢ় এবং সজীব রাখে। এবং খেসারের ডালে থাকা আইরন উপাদান ত্বকের স্বাস্থ্য এবং মেরামতে সাহায্য করে। 

তবে ত্বক ভালো রাখতে শুধুই খেসারির ডাল এর উপর নির্ভরশীল হবেন না। সুস্থ ত্বকের জন্য সুষম খাদ্যাভাস, পর্যাপ্ত পানি, নিয়মিত ত্বকের যত্ন এবং সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে বেঁচে থাকাও গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি আরো বিস্তারিত জানতে চান তাহলে একজন ডার্মাটোলজিস্ট এর সাথে পরামর্শ করা ভালো হবে।

খেসারী ডালের অপকারিতা

খেসারির ডাল সাধারণত খুবই পুষ্টিকর একটি খাদ্য। এটি আপনার শরীরের বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত রাখতে সাহায্য করে থাকে। তবুও সকল খাদ্যের মতন অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে অপকারিতা রয়েছে। 

নিচে খেসারের ডালে অপকারিতা গুলো দেওয়া হলোঃ

বিষক্রিয়াঃ খেসারির ডালে রয়েছে উচ্চমাত্রায় গ্লাইকো প্রোটিন একটি উপাদান যা বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে। এ বিষক্রিয়ার ফলে আপনার নিম্নলিখিত লক্ষণ গুলো দেখা দিতে পারেঃ

  • বমি হওয়া
  • বমি বমি ভাব হওয়া
  • মাথা ব্যথা করা
  • ডায়রিয়া হওয়া
  • জ্বর হওয়া
  • পেট ব্যথা হওয়া
  • ত্বকে ফুসকুড়ি হয়

এই ডালের বিষক্রিয়া থেকে বাঁচতে হলে আপনাকে রান্নার সময় প্রচুর পরিমাণে পানিতে ভালো করে ধুয়ে ডালকে রান্না করতে হবে। আর রান্নার সময় বেশি পানি ব্যবহার করবন।

এলার্জিঃ সকলের সমস্যা দেখা দেয় না। তবে যাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে খেসারির ডাল খাওয়ার ফলে এলার্জি হতে পারে।

গ্যাস এবং পেট ফাঁপাঃ এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার জাতীয় পদার্থ রয়েছে যা আপনার গ্যাস বা পেট ফাপার কারণ হতে পারে।

ওজন বৃদ্ধি হওয়াঃ যেহেতু খেসারির ডাল একটি উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার। সেহেতু আপনি যদি মোটা হয়ে থাকেন তাহলে অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার ফলে আপনার ওজন বৃদ্ধি হতে পারে। সেহেতু সাবধানে পরিণত পরিমাণে খাবেন।

উপরের অপকারিতা গুলো থেকে বেঁচে থাকতে হলে আপনাকে পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে। তবে খেসারির ডাল খাওয়া ছাড়বেন না কেননা এতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে এবং অনেক উপকারিতা রয়েছে যা আমরা পূর্বে আলোচনা করে এসেছি। তাই বিভিন্ন রোগ থেকে শরীরকে মুক্ত রাখতে খেসারির ডাল খাওয়া শুরু করুন।

খেসারি ডালের দাম

খেসারি ডালের উপকারিতা ও অপকারিত এবং খেসারি ডালে কি থাকে এ সম্পর্কে আমরা উপরে খুব ভালোভাবে জেনে এসেছি। যেহেতু আমরা উপকার সম্পর্কে জানলাম এখন আমাদের কিনা দরকার। সেহেতু এখন আমাদের জানতে হবে খেসারি ডালের দাম কত এবং কোথায় কিনতে পাওয়া যায়। খেসারি ডাল আপনি অনলাইন এবং অফলাইন দুই মাধ্যমে কিনতে পারবেন। 

আপনি বাংলাদেশের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ডাল কিনতে পারেন এবং সেখানের দাম রয়েছে বা লোকাল বাজারের মুদি দোকানেও আপনি ডাল কিনতে পারেন। এখানে আমি অনলাইনে দুটি ওয়েবসাইট সম্পর্কে বলবো যেখান থেকে আপনি খেসারির ডাল কিনতে পাবেন। একটি হল freshsfoodsbd.com এখানে আপনি ১ কেজি খেসারির ডালের জন্য দাম ধরা হয়েছে ১০০ টাকা। 

আপনি যদি এখান থেকে কিনতে চান তাহলে এখানে খুব সহজ একটি পদ্ধতি রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি অর্ডার প্লেস করে বাড়িতে ডেলিভারি নেয়ার মাধ্যমে ডাল কিনতে পারেন। দ্বিতীয় ওয়েবসাইটটি হচ্ছে আন্তর্জাতিক সুন্নত প্রচার কেন্দ্র ওয়েবসাইট। এ ওয়েবসাইটে আপনি ১ কেজি খেসারির ডাল কিনতে পাবেন ৮০ টাকা দরে। 

আপনি যদি এখান থেকে খেসারির ডাল কিনতে চান তাহলে আগের ওয়েবসাইটের মত এখানেও খুব সহজে অর্ডার প্লেস করে বাড়িতে ডেলিভারি নেওয়ার মাধ্যমে কিনতে পারেন। এই দুই ওয়েবসাইট ছাড়াও আপনি আরো অন্যান্য ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ডাল কিনতে পারেন। এটি আপনার উপর নির্ভর করে আপনি কোথা থেকে খেসারির ডাল কিনবেন। অন্যথায় আপনি লোকাল মদি বাজারেও খেসার ডাল কিনতে পারেন।

খেসারি ডালের ছবি

খেসারি ডালের ছবি দেখলে আপনি হয়তো বা চিনতে পারবেন ডাল দেখতে কেমন দানাদার এবং মাঝখান দিয়ে ভাঙ্গা তবে এই দলটি প্রায় অন্যান্য ডালের কাছাকাছি দেখতে তাই চিনতে সমস্যা হতে পারে নিজে খেসারি ডালের একটি ছবি দেওয়া হল যার দ্বারা আপনি চিনতে পারেন কোনটি খেসারি ডাল

খেসারি ডালের ছবি

শেষ কথাঃ খেসারি ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা

প্রাণপ্রিয় পাঠক মন্ডলী!! আজকের এই আর্টিকেলটি খুবই ধৈর্য সহকারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ। আশা করছি আপনি যে বিষয়ে জানতে এসেছিলেন সে সম্পর্কে সন্তুষ্ট জনক উত্তর পেয়েছেন। আমরা পুরো আর্টিকেল জুড়ে খেসারির ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খেসারি ডালে কি থাকে, খেসারি ডালের দাম এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

আপনি যদি আর্টিকেলে কোন ভুল তথ্য পেয়ে থাকেন তাহলে আমাদেরকে নিচে দেয়া কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা আর্টিকেলটি সংশোধন করার চেষ্টা করব। যদি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার পর আপনার মনে হয় যে আপনি উপকৃত হয়েছেন এবং অন্যদেরকে উপকৃত করতে চান তাহলে আর্টিকেলটি আপনার বিভিন্ন বন্ধু বান্ধবের নিকট শেয়ার করুন। যাতে তারা উপকৃত হতে পারে। এটাই আমাদের কাম্য।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নবান্ন আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url