গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার ২টি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম । জাফরান খাওয়ার উপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন। আবার এটাও জানতে চান জাফরান খাওয়ার উপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কি কি। সাধারণত জাফরান সবার জন্যই স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারী ও কার্যকরী বিশেষ করে গর্ববতী মায়েদের জন্য জাফরান খুবই উপকারী হিসেবে বিবেচিত।

গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম
 গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়া বিষয়ে অনেকেই ধারণা করেন যদি গর্ভবতী অবস্থায় জাফরান খাওয়া হয় তবে সন্তান সুন্দর দেখতে হয়। আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য জাফরান খুবই জরুরী বলে উল্লেখ করেছেন। আমরা আজকে এই আর্টিকেলে আলোচনা করব গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম কখন কিভাবে কতটুকু খেতে হয় এবং জাফরান খাওয়ার উপকারিতা এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া।

পেইজ সুচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম । জাফরান খাওয়ার উপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

জাফরান খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে তার মধ্যে কতিপয় উপকারিতা নিচে উল্লেখ করা হলো। আপনারা যদি জানতে চান জাফরান খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে তাহলে নিচের লেখাগুলো পড়তে থাকুন। তাহলে আসুন বেশি দেরি না করে শুরু করা যাক।

মুড সুইংঃ জাফরান মুড সুইং নিয়ন্ত্রণ করে। গর্ভাবস্থায় শরীরের বিভিন্ন হরমোনের পরিবর্তন হয় যার ফলে মুড সুইং হতে লক্ষ্য করা যায়। এ সময় গর্ভবতী মহিলাদের মন হঠাৎ করে পরিবর্তন হয় যেমন, হঠাৎ করে রেগে যায় আবার পরক্ষণে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। জাফরান বা কেশর এন্টি ডিপ্রেশন হিসেবে কাজ করে যা মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। জাফরান খেলে সেরোটোনিন হরমোন উৎপাদিত হয় যা মুড ভালো রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

রক্তচাপঃ জাফরান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। গর্ভাবস্থায় মহিলাদের হৃদ স্পন্দন এর মাত্রা ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে রক্তচাপ ওঠা নাম লক্ষ্য করা যায়। জাফরান এ রয়েছে পটাশিয়াম এবং প্রসেটিন। যা রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষভাবে সহায়তা করে । এছাড়াও জাফরান বমি ভাব এবং মাথাব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।

হজমঃ জাফরান হজম ঠিক রাখে। গর্ভাবস্থায় বেশিরভাগ মহিলারই হজম ক্ষমতা কমে যায়। জাফরান সেবনের ফলে পাচক তন্ত্রের রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে তোলে। এবং মেটাপলিজম উন্নত করতে সহযোগিতা করে। এর ফলে হজমের উন্নতি হয়। এছাড়াও পেটের ফোলা ভাব কমাতে জাফরান বিশেষভাবে সহায়তা করে।

হৃদরোগঃ জাফরান হৃদরোগের সমস্যা থেকে রক্ষা করে এমনকি হার্টের রোগ থেকেও রক্ষা করতে পারে।গর্ভাবস্থায় অনেক মহিলা প্রচন্ড পরিমাণে ফ্যাট জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করেন যা কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। জাফরানে উপস্থিত ট্রাই গ্লিসারাইড ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।

শ্বাসযন্ত্রঃজাফরান শ্বাস যন্ত্রের অসুস্থতা নিরাময় করে। জাফরানে এন্টি ইনফ্লেমেন্টরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে এটি ফুসফুসের ফোলা ভাব ও প্রদাহ কম করে ফলে স্বাভাবিকভাবেই শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে অসুবিধা হয় না। জাফরান গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে হাঁপানিতে আক্রান্ত রোগীদের ফুসফুস এবং শ্বাসনালীতে উপস্থিত যেকোন প্রতিবন্ধকতা দূর করতে অত্যন্ত সহায়ক।

চুল ও ত্বকঃ জাফরান চুল ও ত্বকের সমস্যা দূর করে। গর্ভাবস্থায় হরমোনের ওঠা নামার কারণে প্রচুর চুল পড়তে শুরু করে এবং ত্বকের অনেক সমস্যা দেখা দেয়। আপনারা যদি জাফরান ব্যবহার করেন তাহলে চুল ওঠা কমবে এবং ত্বকের এই সমস্যাগুলো দূর হবে। জাফরানে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট চুলে পুষ্টি যোগায় এবং শক্তিশালী করে তোলে। জাফরান হলো ব্লাড কিউরিফেয়ার তাই ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।

ভালো ঘুমঃ জাফরান ভালো ঘুম হতে সহায়তা করে। গর্ভাবস্থার অগ্রগতি হওয়ার সাথে সাথেই ভাল ঘুম একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে। মা ক্রমবর্তমান পেট নিয়ে আরামের সাথে সামঞ্জস্য করতে এবং হাড়ের প্রসারিত অস্বস্তি হ্রাস করার জন্য সারারাত এপাশ-ওপাশ করতে থাকে। এই সময় আপনি জাফরান-চা বা জাফরান-দুধ খেতে পারেন। দুধের সাথে জাফরান পান করলে ভালো ঘুম হতে সহায়তা করে।

মাড়িতে ব্যথাঃ জাফরান মাড়িতে ব্যথা দূর করে। হরমোনের তীব্রতা গর্ভাবস্থায় প্রায় মাড়ির ব্যথা বা ঘায়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই ব্যাথা থেকে সস্থি পেতে আপনি আপনার মাড়ির ওপর আস্তে আস্তে জাফরান দিয়ে মাসাজ করতে পারেন তাহলে এটি আপনাকে আরাম দেবে। এটি ঘা এবং সংবেদনশীলতা রাস করতে সহযোগিতা করে।

স্বাস্থ্যবান করতেঃ জাফরান আপনাকে স্বাস্থ্যবান করতে সাহায্য করবে। জাফরানে উপস্থিত পটাশিয়াম কিডনির স্বাস্থ্য বজায় রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কারণ এটি সঠিক ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে। যে সমস্ত লোকেরা পটাশিয়াম সমৃদ্ধ ডায়েট খায় তারা হাড়ের ঘনত্ব ও চরবিহীন ওজন বাড়িয়ে তোলে।

জাফরানে রয়েছে প্রাকিতিক উপাদান

জাফরান গর্ভবতী মায়েদের জন্য একটি আদর্শ ভেষজ। কারণ এটিতে রয়েছে অনেক ধরণের প্রাকিতিক উপাদান।নিচে এই উপাদানের নাম উল্লেখ করা হলোঃ

জাফরানে রয়েছে প্রাকিতিক উপাদান

    •  ফলিক এসিড
    •  নিয়াসিন
    •  থায়ামিন
    •  ভিটামিন ই
    •  ভিটামিন সি

গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার সময়

আমরা এতক্ষন জানলাম গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার উপকারিতা। জাফরান খেলে কোন কোন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং জাফরানের ভিতর কি কি প্রাকিতিক উপাদান রয়েছে।

আমরা এই আলোচনা থেকে জানতে পারব গর্ভাবস্থায় কখন জাফরান খাওয়া উচিত এবং কখন খেলে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে তাই চলুন বেশি দেরি না করে আলোচনা শুরু করা যাক।

গর্ভাবস্থায় জাফরান কখন খাওয়া উচিৎ 

পঞ্চম মাসের পর থেকেই দ্বিতীয় তইমাসিকের সময় জাফরান খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয় এবং নিরাপদ বলে বিবেচনা করা হয়। গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার ফলে শরীরের উত্তাপ বাড়ায়। যা জরায়ু সংকোচন এর ফ্রিকুয়েন্সি বাড়ায়। তাই এটা রাতের বেলায় সেবনের অনুমতি দেওয়া হয় না। কারণ এই সময়টিতে আপনার শরীর প্রচুর প্রক্রিয়া চালিয়ে যায়।

জাফরান কখন খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ

চিকিৎসকরা সুপারিশ করেন যে প্রতিদিন দশ গ্রামের বেশি জাফরান খাওয়া উচিত নয় কারণ এতে উপকারের চেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এবং এটি আপনার শিশুর উপর প্রভাব ফেলে গর্ভপাত কে প্রভাবিত করে। যদিও এটিতে উচ্চমানের পুষ্টিগুন রয়েছে। তাই কোন ক্ষতি বা প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া এড়াতে গর্ভাবস্থায় জাফরান কখন খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে সচেতন হওয়া অবশ্যই জরুরী।

গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম 

আমরা এখন পর্যন্ত জানলাম  যে গর্ভাবস্থায় জাফরান সীমিত পরিমাণ ব্যবহার করা নিরাপদ। তবে  গর্ভাবস্থায় জাফরান কিভাবে ব্যবহার করবো সেই সম্পর্কে গর্ভবতী মায়েদের ভালোভাবে অবহিত করা জরুরী।

জাফরান মূলত দুই পদ্ধতিতে খাওয়া হয়ঃ

    1. ভেজানো জাফরান
    2. জাফরান চূর্ণ 

১।ভেজানো জাফরানঃ 

এই ধরনের জাফরান বাড়িতে বা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের সবচেয়ে সাধারণ উপায়। জাফরানের সুতোগুলো আস্তে আস্তে পিষে জল, দুধ বা ঝোলের মধ্যে স্থানান্তরিত করা হয়। এটি খাওয়া বা কোন রেসিপিতে ব্যবহারের পূর্বে 10 মিনিট ভিজিয়ে রাখা উচিত।

২।জাফরান চূর্ণঃ

এই ধরনের জাফরান পুষ্টিকর স্যুপ ও সালাদ ডিশের সাথে ব্যবহার করার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।  আপনি খুব সহজে আঙ্গুল দিয়েই জাফরানের সুতোগুলো ভেঙ্গে ফেলতে পারেন। এবং এটি সরাসরি বিভিন্ন খাবারের ব্যবহার করতে পারেন। 

গর্ভাবস্থায় জাফরান কিভাবে ব্যবহার করবেন

ক্যালসিয়াম আপনার শিশুর বুদ্ধি ও বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ। গর্ভাবস্থায় পঞ্চম মাসে প্রবেশের সময় দুধে জাফরান যুক্ত করতে পারেন। 

অন্যথায় আপনি বাদাম তিস্তা ও জাফরান পিষে দুধের সাথে মিশিয়ে সকাল এবং সন্ধ্যায় জাফরান দুধ পান করতে পারেন।

এছাড়া চালের সাথে রান্না করে অথবা সুপে জাফরান খেতে পারেন।

তাছাড়া পানির সাথে জাফরান খেতে পারেন। আপনি কেবল এক গ্লাস পানিতে জাফরান দিয়ে পান করতে পারেন। এটা আপনাকে হজমের সহায়তা করবে।

গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

আমরা এই পর্যন্ত গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার অনেক উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানলাম।এবার আমরা জানবো গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে। তাহলে আসুন বেশি দেরি না করা শুরু করা যাক।

উচ্চমাত্রায় জাফরান খেলে গর্ভবতী মায়েদের জন্য বিপদজনক হতে পারে। কারণ এটি জরায়ুর সংকোচন এর দিকে পরিচালিত করে

গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

যেমনঃ গর্ভস্রাব, জাফরান শরীরের উষ্ণতা ও তাপমাত্রা বাড়ায় জরায়ুর সংকোচনের দিকে নিয়ে যায়। এটি গর্ভাবস্থার প্রথম সপ্তাহেই গর্ভপাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে। কেবলমাত্র দ্বিতীয়ত ২ তইমাসিকের পরে এবং স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শের মাধ্যমে জাফরান খাওয়া শুরু করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

অনেক ক্ষেত্রে গর্ভবতী মহিলারা জাফরান গ্রহণের কালে উদ্বেগ, শুকনোমুখি ভাব এবং মাথা ব্যথা অনুভব করে। যদি আপনি এই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হন তাহলে জাফরান না খাওয়াই ভালো। কোন ব্যক্তি উচ্চমাত্রায় জাফরান গ্রহণ করেন তখন এটি জাফরানের বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে। এটি ত্বক চোখ এবং ঝিল্লি হলুদ হয়ে যাওয়া, রক্তযুক্ত ডায়রিয়া, নাক দিয়ে রক্তপাত, ঠোঁট থেকে রক্তপাত এবং আরো অনেক সমস্যা হতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নবান্ন আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url