চিচিঙ্গা খাওয়ার ১৮টি কার্যকরী উপকারিতা - চিচিঙ্গার অপকারিতা
চিচিঙ্গা খাওয়ার উপকারিতা ও চিচিঙ্গার অপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন। যদি আপনিও তাদের মধ্যে একজন হয়ে থাকেন তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। কেননা আমি আপনাকে চিচিঙ্গা খাওয়ার এমন ১৮টি কার্যকরী উপকারিতা সম্পর্কে জানাবো যা জানা আমাদের সকলের জন্য খুবই জরুরী।
আজকে আমরা এই আর্টিকেলে আলোচনা করবো চিচিঙ্গা খাওয়ার উপকারিতা, চিচিঙ্গার অপকারিতা, চিচিঙ্গার পুষ্টিগুণ এবং চিচিঙ্গা সম্পর্কিত আরো বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে। তাই চলুন বেশি দেরি না করে শুরু করা যাক আজকের আলোচনা।
পেইজ সূচিপত্রঃ চিচিঙ্গা খাওয়ার উপকারিতা - চিচিঙ্গার অপকারিতা
চিচিঙ্গার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানি
চিচিঙ্গা পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানা আমাদের সবচেয়ে প্রথমে জরুরী। আমাদের দেশে অতি পরিচিত এবং মজাদার সবজি হিসেবে আমরা চিচিঙ্গা খেয়ে থাকি। আমরা কম বেশি সকলেই চিনি চিচিঙ্গা নামের সবজিকে।
এই চিচিঙ্গা কে আমরা বিভিন্ন নামে বিভিন্ন এলাকায় ডেকে থাকি কেউ স্নেক গার্ড, সার্পেন্ট গার্ড, টমেটো গার্ড ইত্যাদি বলে। আমরা চিচিঙ্গা খাই বটে কিন্তু চিঙ্গার পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে মোটেই অবহিত নই। তাই চলুন আমরা চিচিঙ্গা তে কি কি পুষ্টিগুণ রয়েছে তা জেনে আসি।
প্রতি ১০০ গ্রাম চিচিঙ্গাতে রয়েছেঃ
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
আর্দ্রতা | ৯৫.৬ শতাংশ |
এনার্জি | ১৮ কিলো ক্যালরি |
কার্বোহাইড্রেট | ৩.৪ গ্রাম |
ফাইবার | ০.৮ গ্রাম |
ফ্যাট | ০.৪ গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ২৭ মিলিগ্রাম |
ক্যারোটিন | ৯৭ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ২২ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ০.৪ মিলিগ্রাম |
থায়ামিন | ০.০৫ মিলিগ্রাম |
নিয়াসিন | ০.৫ মিলিগ্রাম |
রিভোপ্লাবিন | ০.০৭ মিলিগ্রাম |
চিচিঙ্গা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে চলুন জেনে আসি
চিচিঙ্গা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের প্রত্যেক মানুষের জন্য জানা উচিত। আমরা ইতিমধ্যে চিচিঙ্গার পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে জানলাম। এখন আমরা চিচিঙ্গার উপকারিতা সম্পর্কে জানব। চিচিঙ্গাতে প্রচুর পরিমাণে উপকারিতা রয়েছে কেননা এটি একটি ন্যাচারাল এন্টিবায়োটিক তরকারি।
এতে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান রয়েছে। এটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক ধরনের উপকার করে থাকে। আমরা আজকে এখানে চিচিঙ্গা খাওয়ার ১৮ ধরনের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো। তাই চলুন জেনে আসি উপকারিতা গুলো।
এক নজরে চিচিঙ্গা খাওয়ার ১৮ টি উপকারিতাঃ
- ক্যান্সার প্রতিরোধে
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
- হজম শক্তি বৃদ্ধিতে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে
- চুলের সুস্বাস্থ্যে
- খুশকি দূর করতে
- ত্বকের যত্নে
- বিষাক্ত পদার্থ দূরীকরণে
- লিভারের সমস্যায়
- জ্বর নিরাময়ে
- কফ-কাশি দূরীকরণে
- ওজন নিয়ন্ত্রণে
- পেটের সমস্যায়
- জন্ডিসের চিকিৎসায়
- মন ভালো রাখতে
- হাড় ও দাত মজবুতে
- হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী
- ডিহাইড্রেশন থেকে মুক্তি পেতে
ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ ক্যান্সার প্রতিরোধে চিচিঙ্গা খুবই কার্যকরী। চিচিঙ্গাতে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট নামক উপাদান রয়েছে যা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ফ্রি রেডিক্যালগুলো প্রতিরোধ করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ চিচিঙ্গা আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেননা চিচিঙ্গাতে পুষ্টিগুণ বেশি রয়েছে এবং ক্যালরি কম পরিমাণে রয়েছে। তাই এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
হজম শক্তি বৃদ্ধিতেঃ চিচিঙ্গা হজম খুব দ্রুত হয়। কেননা এতে প্রচুর পরিমাণে আস রয়েছে যা আপনার কষ্টকাঠিন্য দূর করতেও সহায়তা করে। সেহেতু যেসব শিশু হজমের সমস্যায় ভোগেন অথবা যেসব ব্যক্তিরা হজমের সমস্যায় ভুগছেন তারা এই সবজি নিয়মিত খেতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ কলার মোচার ১৪টি কার্যকরি উপকারিতা ও অপকারিতা - কলার মোচার পুষ্টিগুণ
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে চিচিঙ্গা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, চিচিঙ্গাতে এন্টিবায়োটিক নামক উপাদান রয়েছে। এছাড়াও এতে ভিটামিন সি এবং অনেক এন্টিঅক্সিডেন্ট ও আছে যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
চুলের সুস্বাস্থ্যেঃ আপনার যদি চুলের গোড়া মজবুত করতে হয়, নতুন চুল গজাতে হয়, টাক পড়া রোধ করতে হয় তাহলে চিচিঙ্গা এক্ষেত্রে বেশি উপকারী। প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে যা আপনার চুলের জন্য খুবই উপকারী এবং এটি নতুন চুল গজাতেও সহায়তা করে থাকে।
খুশকি দূর করতেঃ আপনি কি খুশির সমস্যায় ভুগছেন? তাহলে চিচিঙ্গা খেতে পারেন। চিকিৎসা গবেষণা অনুসারে, চুলের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চিচিঙ্গা পাতা ভেষজ টনিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এতে খুশকি বিরোধী উপাদান রয়েছে যার ফলে আপনি চুলের খুশকি থেকে মুক্তি পেতে পারেন। আপনি যদি চিচিঙ্গার রস মাথায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট প্রতি সপ্তাহে তিনবার লাগান তাহলে আশা করা যায় আপনি খুশকি থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।
ত্বকের যত্নেঃ ত্বকের যত্নে চিচিঙ্গা খুবই কার্যকরী। আপনি যদি চিচিঙ্গা খান তাহলে আপনার মৃত টিস্যু দূর করবে। এই সবজিটি ত্বকের বার্ধক্যের প্রক্রিয়া ধীর করে দেয়। আপনার চেহারাতে বার্ধক্যের ছাপ দেরিতে পড়বে।
বিষাক্ত পদার্থ দূরীকরণেঃ আপনার শরীর থেকে বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদান দূর করে শরীর সুস্থ রাখতে এবং আপনার প্রসাবের পরিমাণ বাড়াতে এবং লিভারের কার্যকারিতা বাড়াতে চিচিঙ্গা খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
লিভারের সমস্যায়ঃ আপনি যদি লিভারের অনেক সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে চিচিঙ্গা আপনার নিয়মিত খাদ্যের সাথে রাখতে পারেন। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, চিচিঙ্গাতে প্রচুর হেপাটো প্রটেকটিভ উপাদান রয়েছে যা লিভারের অনেক সমস্যা দূর করে থাকে।
জ্বর নিরাময়েঃ কিছু কিছু জ্বর রয়েছে যেসব জ্বর আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে মানুষের হয়ে থাকে। সে সকল জ্বর দ্রুত সারিয়ে তুলতে পারে এই চিচিঙ্গা। তাই এটি নিয়মিত খেতে পারেন।
কফ-কাশি দূরীকরণেঃ আপনি যদি সিজনাল রোগে কফ-কাশিতে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে চিচিঙ্গা এক্ষেত্রে আপনাকে রেহাই দিতে পারে। চিচিঙ্গা আপনার কফ-কাশি দূর করে শ্বাস-প্রশ্বাসের জটিলতা কমায় এবং বাহিরের ক্ষতিকারক উপাদান যাতে ভিতরে অবস্থান করে বড় ধরনের ক্ষতি সৃষ্টি না করতে পারে সে ক্ষেত্রে চিচিঙ্গা বেশ সক্রিয়।
ওজন নিয়ন্ত্রণেঃ চিচিঙ্গা তে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটরি ফাইবার রয়েছে। এই উপাদান আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য খুবই উপকারী। এই ফাইবারের কাজ হল আপনার পেটের মধ্যে যেয়ে পেট ভরিয়ে রাখার প্রবণতা সৃষ্টি করা অর্থাৎ আপনার মনে হবে যে আপনার পেট ভরা আছে আপনার খিদে পাবে না। এর দ্বারাই আপনি ওজন কমাতে পারবেন।
পেটের সমস্যায়ঃ আপনার বিভিন্ন ধরনের পেটের সমস্যা যেমনঃ এসিডিটি, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, পেপটিক আলসারের সমস্যা ইত্যাদি সমস্যার সমাধানে চিচিঙ্গা খুবই উপকারী।
জন্ডিসের চিকিৎসায়ঃ জন্ডিস এর চিকিৎসায় চিচিঙ্গা খাওয়া খবর জরুরি। জলবাহিত রোগ হিসেবে জন্ডিস সকলেরই পরিচিত। জন্ডিস হলে ডাক্তাররা হালকা খাবার, জল ও কম প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে বলেন। যেহেতু চিচিঙ্গাতে এসব জিনিস রয়েছে সেহেতু আপনি চিচিঙ্গা দিয়ে মাছের ঝোল বানিয়ে খেতে পারেন।
মন ভালো রাখতেঃ প্রত্যেক মানুষের জীবনে কোন না কোন দুশ্চিন্তা লেগেই আছে আপনি যদি এই দুশ্চিন্তা এখনই না মুক্ত করেন তাহলে তার ভবিষ্যতে অনেক বড় আকার ধারণ করতে পারে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে গেলে আপনাকে চিচিঙ্গা খেতে হবে। কেননা চিচিঙ্গাতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা মস্তিষ্কে হ্যাপি হরমোনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই মন ভালো রাখতে চিচিঙ্গা খুবই জরুরী।
হাড় ও দাত মজবুতেঃ আপনার শরীরের হাড় ও দাঁত মজবুতে চিচিঙ্গা বেশ উপকারী। কেননা চিচিঙ্গাতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস প্রচুর পরিমাণে। এ সকল মিনারেল আপনার হাড় ও দাঁত মজবুত করতে ভূমিকা রাখে।
হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারীঃ চিচিঙ্গাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে। যা আপনার কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে সুস্থ রাখে। চিচিঙ্গা আপনার রক্তচাপ কমিয়ে নার্ভাস সিস্টেমকে সুস্থ রাখে এবং হৃদস্পন্দন ঠিক রাখে। তাই বলা যায় এটি হৃদ যন্ত্রের জন্য উপকারী।
ডিহাইড্রেশন থেকে মুক্তি পেতেঃ শরীরকে সবসময় হাইড্রেট রাখতে, ডিহাইড্রেশন থেকে মুক্ত থাকতে চিচিঙ্গার জুড়ি মেলা ভার। আপনি যদি প্রতিদিন নিয়মিত চিচিঙ্গা খাওয়ার অভ্যাস করেন তাহলে শরীরে জলের অভাব হবে না আশা করা যায়।
চিচিঙ্গার অপকারিতা সম্পর্কে জানা জরুরি
চিচিঙ্গার অপকারিতা সম্পর্কে বলতে গেলে বলতে হয় এই সবজিতে তেমন কোন অপকারিতা নেই। চিচিঙ্গাতে প্রচুর পুষ্টি উপাদান রয়েছে এবং প্রচুর পরিমাণে উপকারিতা রয়েছে তা আমরা উপরেই জেনে এসেছি।
এটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী যা নিয়মিত খেলে আমাদের অনেক উপকার হয়। তবে নিচে আমরা কিছু অসুবিধা সম্পর্কে বলার চেষ্টা করব যদিও এখনো বৈজ্ঞানিকভাবে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করা হয়নি।
- যে সকল গর্ভবতী মহিলা এবং স্তন্যদানকারী মহিলারা রয়েছেন তাদের জন্য চিচিঙ্গা খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার জরুরী।
- চিচিঙ্গা তে যেহেতু প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে সেই কারণে কারো কারো ক্ষেত্রে এটি খাওয়ার কারণে পেট ব্যথা এবং গ্যাসের সম্ভাবনা থাকতে পারে।
এই দুটি অসুবিধা ছাড়া আর কোন অসুবিধা চিচিঙ্গা তে নেই আপনি নিয়মিত চিচিঙ্গা খেতে পারবেন। এটি আপনার শরীরকে সুস্থ রাখবে, মন ভালো রাখবে, হাড় সুস্থ রাখবে, হার্ট সুস্থ রাখবে, বিভিন্ন ক্ষতিকারক পদার্থ দূর করবে এবং আরো অনেক উপকার করবে যেগুলো আমরা জেনে আসলাম। তাই চিচিঙ্গা খান এবং সুস্থ থাকুন।
চিচিঙ্গা রেসিপি জেনে শিখে নিন
চিচিঙ্গা রেসিপি অনেক ধরনের রয়েছে আপনি অনেক ভাবে চিচিঙ্গা খেতে পারেন। তার মধ্যে আমি কিছু রেসিপি বলার চেষ্টা করবো আপনারা সাথেই থাকুন। নিচে চিচিঙ্গা রেসিপি গুলো উল্লেখ করা হলো।
রেসিপি ১- মুগ-মসুর ডাল দিয়ে চিচিঙ্গা ভাজি বানানোঃ
যা লাগবেঃ
- চিচিঙ্গাঃ ২টি
- মুগ ডালঃ ১/২ কাপ
- মসুর ডালঃ ১/২ কাপ
- পেঁয়াজ কুচিঃ ২ টেবিল চামচ
- তেজপাতাঃ ১টি
- হলুদের গুড়াঃ ১/২ চা চামচ
- লাল মরিচের গুঁড়াঃ ১/২ চা চামচ
- কাঁচা মরিচঃ ২-৩ টা
- রসুন বাটাঃ ১/২ চা চামচ
- সয়াবিন তেলঃ পরিমাণ মতো
- পানিঃ ১/২ কাপ
রান্নার প্রক্রিয়াঃ
- প্রথমে আপনাকে চিচিঙ্গাটিকে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর সেই চিঙ্গার চামড়া ছাড়িয়ে কুচি কুচি করে কেটে নেবেন। এক্ষেত্রে যদি আপনি চিচিঙ্গার মাঝের বিচিগুলো ফেলে দেন তবে বেশি ভালো হবে।
- এরপরে মুগ ডাল ও মসুর ডাল একসাথে মিশিয়ে ধুয়ে রাখবেন।
- এদিকে একটি কড়াইতে পরিমাণ মতো সয়াবিন তেল নিবেন। সেই তেলটি গরম করে তাতে পেঁয়াজ কুচি হালকা করে ভাজবেন, সেখানে হলুদ গুঁড়া, লাল মরিচের গুড়া এবং স্বাদমতো লবণ দিয়ে একটু নেড়ে নেবেন এবং সেই ধুয়ে রাখা মসুর ডাল ও কুচি করে রাখা চিচিঙ্গা গুলো একসাথে মিশিয়ে চুলার আঁচ কমিয়ে দিবেন। তারপরে ঢাকনা দিয়ে ভালো করে সিদ্ধ করে নেবেন। তারপরে হাফ কাপের মতো পানি দিবেন যাতে ডাল সিদ্ধ হয়। এই রান্নাটি মাখামাখা হবে।
- তারপর চিচিঙ্গা ও ডাল সিদ্ধ হয়ে গেলে তেজপাতা ও কাঁচা মরিচ দিয়ে একটু নেড়ে আবারো ঢাকনা দিয়ে কিছুক্ষণ রান্না করবেন। যখন দেখবেন মাখামাখা হয়ে গেছে তখন নামিয়ে গরম গরম মেহমানকে খেতে দিবেন। দেখবেন দারুন মজা লাগবে এই মুগ-মসুর ডাল এই চিচিঙ্গা ভাজি খেতে।
রেসিপি ২- চিচিঙ্গা এর সাথে মসুর ডালের সবজিঃ
যা লাগবেঃ
- চিচিঙ্গাঃ ১/২ কেজি
- পেঁয়াজকুচি, রসুন কুচি, কাঁচা মরিচ
- মসুর ডালঃ ৩ মুঠো ধুয়ে ভিজিয়ে রাখা
- তেলঃ ২-৩ টেবিল চামচ
- লবণঃ ১-১.৫ চামচ (স্বাদমতো)
- পানিঃ ১/৪
- হলুদ গুঁড়াঃ ১/২ চা চামচ
রান্নার প্রক্রিয়াঃ
- প্রথমে একটি কড়ায় তেল দিয়ে পিঁয়াজ, রসুন, কাঁচা মরিচ দিয়ে নাড়তে থাকুন।
- এবার অল্প পানিসহ ডাল, হলুদের গুড়া এবং লবণ দিয়ে নাড়তে থাকুন।
- তারপর ডাল একটু কষিয়ে নিয়ে কুচি করে নেয়া চিচিঙ্গা গুলো ঢেলে দিন।
- এবার ভালোমতো ডাল চিচিঙ্গা মিশিয়ে মাঝারি আচে ঢাকনা লাগিয়ে ১০ মিনিট রাখুন।
- তরকারি রান্না হয়ে গেছে। নামানোর পূর্বে ধনেপাতা দিয়ে মেহমানকে পরিবেশন করুন। দেখবেন খুবই স্বাদ লাগবে ডাল চিচিঙ্গার সবজী।
চিচিঙ্গা চাষ পদ্ধতি
চিচিঙ্গা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে এখানে আলোচনা করার চেষ্টা করা হবে। আপনারা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন। তাহলে জানতে পারবেন কিভাবে হাইব্রিড জাতের চিচিঙ্গা চাষ করা যায়। নিচে চিচিঙ্গা চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
আরো পড়ুনঃ মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার নিয়ম - মরিঙ্গা পাউডার ২০টি উপকারিতা
আবহাওয়া নির্বাচনঃ প্রথমে আপনাকে আবহাওয়া নির্বাচন করতে হবে। বীজের ভালো অঙ্কুরোদগম ও গাছের ভালো বৃদ্ধির জন্য উচ্চতাপমাত্রা প্রয়োজন হয়ে থাকে। সেহেতু আপনাকে এমন আবহাওয়ার সময় চিচিঙ্গা চাষ করতে হবে যখন দিনের বেলায় ২৫ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকবে এবং রাতের বেলায় ১৮ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকবে অর্থাৎ মোটামুটি শুষ্ক আবহাওয়া।
মাটি নির্বাচনঃ তারপরে আপনাকে মাঠে নির্বাচন করতে হবে। এমন জমি নির্বাচন করুন যেখানে মাটির পানি সহজে চলে যায় না। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে যাতে আবার জ্বলাবোদ্ধতা সৃষ্টি যেন না হয়। দোআঁশ ও এটেল দোআঁশ মাটিতে চিচিঙ্গা চাষ করা সবচেয়ে ভালো হবে।
বীজ বপনের সময়ঃ বাংলাদেশের শীতকাল ২ থেকে ৩ মাস থাকে। আপনি শীতকালে যদি চিচিঙ্গা চাষ করেন তাহলে এই গাছের বৃদ্ধি কম হবে এবং ফলনও কম হবে। তাই যদি আমরা শীতকালে ২-৩ মাস বাদ দিই তাহলে ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত প্রায় সারা বছরের যে কোন সময় আমরা চিচিঙ্গা চাষ করতে পারি এবং ভালো ফলন পাওয়া যায়।
বীজের হারঃ একর প্রতি বীজ বপনে হার ১ থেকে ১.৫ কেজি।
জমি নির্বাচন ও তৈরিঃ এমন জমি বাছাই করতে হবে যে জমিতে সেচ ও পানি নিষ্কাশনের ভালো সুবিধা থাকবে এবং পর্যাপ্ত যেন সূর্যের আলো জমিতে পড়ে তা মাথায় রাখতে হবে। জমি তৈরীর সময় প্রথমে ভালো ভাবে চাষ দিতে হবে প্রায় ৪ থেকে ৫ বার। দেখতে হবে যেন জমিতে কোন আগাছা না থাকে। তারপর চিচিঙ্গা গাছের শিকড়ের যথাযথ বৃদ্ধির জন্য উত্তম রূপে মাদা তৈরি করতে হবে।
বীজ বপনের পদ্ধতি ও দূরত্বঃ
- জমি যদি বড় হয় তাহলে নির্দিষ্ট দূরত্বে নালা কেটে কয়েক ভাগে ভাগ করে নিতে হবে।
- বেডের প্রস্থ ১ মিটার এবং দুই বেডের মাঝে ৩০ সেন্টিমিটার নালা থাকবে।
- চিচিঙ্গার বীজ সরাসরি মাদায় রোপন করতে পারেন। এক্ষেত্রে মাদায় কমপক্ষে দুটি বীজ বপন করতে হবে।
- চিচিঙ্গার জন্য ১.৫ মিটার দূরত্বে মাদা তৈরি করতে হবে।
- চারা গজানোর পর একের অধিক গাছ তুলে ফেলে দিতে হবে।
- বীজের ত্বক শক্ত, পুড়ো তার জন্য আপনি চাইলে পূর্বে বীজ টাকে ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে নিন। তাহলে তাড়াতাড়ি অঙ্কুরিত হবে।
- মাদায় বীজ বুনতে বা চারা রোপন করতে হলে আপনাকে অন্তত ১০ দিন আগে থেকে মাদায় নির্ধারিত পরিমাণ সার প্রয়োগ করতে হবে। মাদার আয়তন হবে ৪০*৪০*৪০ সে.মি
অন্যান্য পরিচর্যাঃ সময়মত আপনাকে নিড়ানি দিতে হবে। যাতে কোন আগাছা না জন্মে তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং পরিষ্কার করতে হবে। খরা যদি হয় তাহলে প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ দিতে হবে। এই সেচ কোন কোন সময় ২ দিন বা ৩ দিন পরপর দেওয়া লাগতে পারে।
চিচিঙ্গার চাষ সম্পর্কে যদি আরো বিস্তারিত জানতে চান এবং কি কি সার কখন দেওয়া প্রয়োজন এই সম্পর্ক যদি বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আপনি বাংলাদেশ কৃষি আবহাওয়া তথ্য সেবা এর ওয়েবসাইটে গিয়ে বিস্তারিত তথ্য পাবেন।
শেষ কথাঃ চিচিঙ্গা খাওয়ার উপকারিতা - চিচিঙ্গার অপকারিতা
প্রাণপ্রিয় পাঠক মন্ডলী!! আশা করি আপনি যে বিষয় সম্পর্কে জানতে এসেছিলেন তা জানতে পেরেছেন। আজকে আমরা এই আর্টিকেলে চিচিঙ্গা খাওয়ার উপকারিতা, চিচিঙ্গার অপকারিতা, চিচিঙ্গার চাষ পদ্ধতি, চিচিঙ্গা রেসিপি ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এই আর্টিকেল পড়ার পর যদি আপনার মনে কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে আমাদেরকে জানাতে পারেন।
আমরা তার উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। আমরা পুরো আর্টিকেল জুড়ে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। যদি এই আর্টিকেলে আপনার কোন ভুল ধরা পড়ে থাকে তাহলে আমাদেরকে জানাবেন আমরা তা পরবর্তীতে সংশোধন করার চেষ্টা করবো। যদি এই আর্টিকেল পড়ে উপকৃত হয়েছেন বলে মনে করে থাকেন এবং অন্যদেরকে উপকৃত করতে চান
তাহলে আপনি আপনার বিভিন্ন বন্ধু-বান্ধবের নিকট আর্টিকেল শেয়ার করতে পারেন। যাতে তারা চিচিঙ্গার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে উপকৃত হতে পারে। এটাই আমাদের কাম্য।
নবান্ন আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url