চাল কুমড়ার ১৫টি কার্যকরী উপকারিতা ও অপকারিতা (বিস্তারিত দেখুন)
চাল কুমড়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। আমাদের দেশের খুবই পরিচিত একটি সবজির নাম জালি বা চালকুমড়া। এই সবজির অনেক উপকারিতা রয়েছে। আমি আপনাকে এমন ১৫টি উপকারিতা সম্পর্কে বলবো যা আপনার আমার সবার জন্যে জেনে থাকা খুবই জরুরী।
আজকে আমরা এই আর্টিকেলে আলোচনা করব জালি বা চাল কুমড়াতে কি কি পুষ্টিগুণ রয়েছে। চাল কুমড়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, চাল কুমড়ো খাওয়ার উপকারিতা ও চাল কুমড়ার মোরব্বা কিভাবে রান্না করে খাওয়া যায় তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তাই চলুন বেশি দেরি না করে শুরু করা যাক আজকের আলোচনা।
পেইজ সূচীপত্রঃ চাল কুমড়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
চাল কুমড়াতে কি কি পুষ্টিগুণ রয়েছে
চাল কুমড়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানার আগে আমাদের জানতে হবে চাল কুমড়াতে কি কি পুষ্টিগুণ রয়েছে। আমরা চাল কুমড়া বা জালি কুমড়া অনেকেই পছন্দ করি। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে এটি খুবই উপকারী এবং বহু রোগের উপশমের ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী। তাই আসুন আমরা চাল বা জালি কুমড়ার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নিই।
জালি বা চালকুমড়াতে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল, শর্করা ও ফাইবার। চাল কুমড়া বা জালি কুমড়ায় আরো রয়েছে খাদ্য শক্তি, আমিষ, শর্করা, ফাইবার, চর্বি, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, কলেস্টোরেল, লৌহ, জিংক ও ফসফরাস। আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন উপস্থিত রয়েছে তাই আমাদের উচিত নিয়মিত জালিকুমড়া খাওয়া যাতে করে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে বাঁচা যায়।
চাল কুমড়ার ১৫টি কার্যকরী উপকারিতা ও অপকারিতা
চাল কুমড়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে এখন আমরা জানবো। চাল কুমড়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। বিশেষ করে পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমাদের সবারই জানা আছে। তবে এই জালি বা চাল কুমড়া কোন কোন রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয় সে সম্পর্কে আমাকে জানা উচিত। আমরা অনেকেই বিভিন্ন রোগে ও সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আছি। এই সকল সমস্যা থেকে প্রাকৃতিক ভাবে বাঁচতে হলে আমাদেরকে চাল কুমড়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে হবে।
মস্তিষ্কের রোগ ভালো করেঃ আমাদের অনেকেরই মাথা গরম হয়ে যাওয়া, ঘুমের সমস্যা, মাথা ব্যাথা, উন্মাদনা সৃষ্টি হওয়া এবং বিভিন্ন মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকি। এই সব রোগ থেকে মুক্ত থাকতে হলে আমাদেরকে নিয়মিত জালি বা চাল কুমড়া খেতে হবে।কেননা চাল কুমড়া বা জালি কুমড়াতে রয়েছে এমন কিছু পুষ্টি উপাদান যা মানসিক রোগে আক্রান্ত রোগীদের ব্রেইন নার্ভ ঠিক রাখতে সহযোগিতা করে।
আরো পড়ুনঃ ঢেঁড়সের ১৩টি উপকারিতা ও অপকারিতা । ঢেঁড়স খেলে কি এলার্জি হয়
এমনকি জালি বা চাল কুমড়ায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। আর এ আয়রন পুরো শরীরের রক্ত প্রবাহ সঠিকভাবে বজায় রাখতে সহায়তা করে।যার দরুন আমাদের ব্রেনের নার্ভ সুস্থ থাকে। যদি আপনাদের মনে রাখতে না পারার সমস্যা থাকে তাহলে ২ থেকে ৩ গ্রাম জালি বা চাল কুমড়ার বীজের শুকনো শাঁস চূর্ণ এবং সামান্য মধু একসাথে মিশিয়ে খেতে হবে। তাহলে আশা করা যায় এই সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
যক্ষা রোগের উপসর্গ কেটে যায়ঃ আমাদের সমাজের একটি মারাত্মক ব্যাধি যক্ষ্মা। আমাদের যক্ষা রোগের উপসর্গ যদি দেখা দেয় প্রাথমিকভাবে আমাদের ঘরোয়া কিছু চিকিৎসা করা উচিত। যাতে এই যক্ষা রোগটা না বাড়ে। এ যক্ষা রোগের উপসর্গ প্রাথমিকভাবে কাটানোর জন্য আমাদেরকে প্রতিদিন চাল কুমড়ার রস খাওয়া উচিত।
বিশেষ করে যাদের কাশির সাথে রক্তপাত হয় এসব ক্ষেত্রে চাল কুমড়ার রস একটি মহা ঔষধ। আমরা যদি প্রতিদিন চাল কুমড়া রস খেতে পারি তাহলে কাশির সাথে রক্ত পড়া বন্ধ হবে। ৩ থেকে ৪ চা চামচ রস সামান্য চিনি মিশিয়ে তার সাথে যদি বাসক পাতার রস দেওয়া যায় তাহলে ব্লেডিং বন্ধতে ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।
এমনকি এ রসটা এক গ্লাস দুধে ও চিনির সাথে মিশেও খাওয়া যেতে পারে। শুধু যক্ষার ক্ষেত্রেও নয় অন্যান্য যত ধরনের মুখ দিয়ে রক্ত পড়া জড়িত অসুখ রয়েছে এসব বাসক পাতা দিয়ে খান তাহলে এটা আপনার জন্য উপকার করবে। এর সাথে অর্শের রক্তপাত বন্ধ করার জন্য আপনি জালি কুমড়ার রস খেতে পারেন।
জন্ডিস ভালো করেঃ আমরা অনেকেই জন্ডিস রোগে আক্রান্ত। আমরা বিভিন্ন ওষুধ খাচ্ছি তারপরও জন্ডিস ভালো হয় না। তো আপনি যদি প্রাকৃতিকভাবে জন্ডিস থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে আপনাকে নিয়মিত জালি বা চাল কুমড়া খেতে হবে। আপনি যদি জালি বা চাল কুমড়া তাজা অবস্থায় তরকারিতে কম তেল দিয়ে রান্না করে খান তাহলে আপনার জন্ডিস দ্রুত সেরে যাবে। অথবা আপনি যদি জালি বা চাল কুমড়া টুকরো টুকরো করে কেটে রোদে শুকিয়ে গুড়া করে অথবা মোরব্বা বানিয়ে খান তবুও এটি আপনার জন্ডিস সারাতে কাজ করবে।
শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করেঃ আমাদের মধ্যে যাদের শারীরিক দুর্বলতা রয়েছে তারা জালি বা চাল কুমড়া খেতে পারেন। এটা আমাদের উপকার আসবে। চাল কুমড়া বা জালি কুমড়া এনার্জি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি টু, ভিটামিন সি। যা পুষ্টি উপাদানকে শক্তিতে রূপান্তর করে।
আমাদের শরীর ভালো ভাবে কাজ করা ও হরমোনের বৃদ্ধির ভারসাম্য ঠিক রাখতে এটি গুগরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা যারা দিনমজুরি সারাদিন কাজ করি আমাদের পরিশ্রম করার ক্ষমতা এ চাল কুমড়া বাড়ায়। দুর্বলতা আসলে চাল কুমড়া তা দূর করে দেয়।
আপনি যদি আপনার দেহকে দিনভর চাঙ্গা রাখতে চান তাহলে জালি বা চাল কুমড়ার লাড্ডু খেতে হবে আপনাকে। অথবা আপনি পাকা বীজের শ্বাস বের করে প্রথমে ভালো মতো পিষতে হবে। এরপর পেষা শাঁস ঘিয়ে ভেজে চিনিতে গড়িয়ে লাড্ডু বানাতে হবে। এটি খেলে ক্লান্তি থাকবে না। আপনার শরীর আবার শক্তি ফিরে পাবে চাঙ্গা হয়ে যাবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ আমাদের অনেকেরই ডায়াবেটিস সমস্যা রয়েছে। আমাদের সমাজে ডায়াবেটিস একটি সাধারণ রোগ হিসেবে ধরা হয় প্রায় সবারই ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। এ ডায়াবেটিস এর জন্য আমরা নিয়মিত গ্যাসের ওষুধ খেয়ে থাকি। যা আমাদের কিডনির প্রচুর ক্ষতি করে।
তা আপনি যদি প্রাকৃতিকভাবে ডায়াবেটিসের হাত থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে আমাদেরকে নিয়মিত জালি বা চাল কুমড়া খেতে হবে। আপনি যদি চাল কুমড়ার রস খান তাহলে এটি ডাইবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অথবা আপনি জালি বা চাল কুমড়ার মোরব্বা, হালুয়া খেতে পারেন এটা আপনার অনেক রোগ সারিয়ে তুলবে।
যেমন আপনার যদি কষ্ট কাঠিন্য, পেট ফাঁপা এবং পেশাবের কোন কারণে অনিয়মিত হয় তাহলে আপনি জালি বা চাল কুমড়া খান তবে এটি আপনার অনেক উপকারে আসবে।
ত্বক পরিচর্যাঃ আমরা যারা মুখের যত্ন নিয়ে থাকি এবং চুলের যত্ন নিয়ে থাকি এসব ক্ষেত্রে আমাদেরকে চাল কুমড়ার রস অনেক বেশি সাহায্য করে। আমরা যদি ত্বককে উজ্জ্বল। ত্বকের উপর থেকে বয়সের ছাপ দূর করতে চাই, চুলকে চকচক রাখতে চাই, তাহলে আমাদেরকে জালি বা চাল কুমড়া ব্যবহার করতে হবে।
জালি বা চাল কুমড়ার রস ত্বক এর উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে আমাদেরকে সাহায্য করে। আপনি যদি চাল কুমড়ার রস নিয়মিত চুলে ও ত্বকে মাখেন তাহলে আপনার চুল চকচক এবং ত্বক সুন্দর হবে এবং বয়সের ছাপ চলে যাবে।
হৃদরোগ সারাতেঃ হৃদরোগ এবং হৃদযন্ত্রের বিরুদ্ধে সমস্যা আমাদের অনেকেরই দেখা যায়। সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদেরকে জালি বা চাল কুমড়া খেতে হবে। অনেক চিকিৎসকে এসব রোগের নিরাময়ের জন্য পাকা চাল কুমড়ার হালুয়া খেতে বলেন এবং সেটি ছাগলের দুধ দিয়ে বানিয়ে দেন তাহলে এটি রোগীর জন্য খুবই উপকার হবে। ভুল করেও গরুর দুধ দিয়ে দেওয়া যাবে না এতে করে রোগ আরো বৃদ্ধি হতে পারে।
হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখেঃ হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখার জন্য আমরা কি না করে থাকি। চালকুমড়া খান তাহলে এটি আপনার হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখতে সহযোগিতা করবে। কেননা ভিটামিন সি থাকার কারণে কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম ভালো থাকে।
এতে রয়েছে পটাশিয়াম যা রক্তালিকা সচল রাখে। এতে রক্ত প্রবাহ ভালো থাকে। এমন কি চাল কুমড়ায় ভিটামিন সি থাকার কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি কম করে। এছাড়াও অ্যাথেরোসক্লেরোসিস অর্থাৎ রক্তের চর্বি জমা রোগ প্রতিরোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যদি আমাদের নষ্ট হয়ে যায় তাহলে আমাদের শরীরে প্রচুর রোগ আক্রমণ করে।এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাতে না কমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যদি আমরা বাড়াতে চাই তাহলে আমাদেরকে নিয়মিত জালি কুমড়া খেতে হবে।
আমাদের প্রতিদিন যে পরিমাণ ভিটামিন সি গ্রহণ করার প্রয়োজন তার চেয়েও ১৯ শতাংশ বেশি ভিটামিন সি জালি বা চাল কুমড়ায় রয়েছে। ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করে। যেমন এটি ক্যান্সার সৃষ্টিকারী মুক্ত রেডিক্যাল গুলোকে দুর্বল করে দেয়। ভিটামিন সি সাদা রক্ত কণিকা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। জালি বা চাল কুমড়াতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জিংক যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শরীরের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করেঃ আমরা আগেও জেনেছি জালি কুমড়া বা চাল কুমড়াতে ভিটামিন সি প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। জালি বা চাল কুমড়া অনক উপকার করে তার মধ্যে অন্যতম উপকার হলো ক্লোজেন উৎপাদন করে। মাংসপেশী, হাড় গঠন করতে সাহায্য করে।
তাই আমরা যদি আমাদের শরীর বেড়ে ওঠার সময় নিয়মিত খাই তবে আমাদের শরীর খুব ভালোভাবে বেড়ে উঠবে। এছাড়াও বিভিন্ন রোগ থেকে সেরে ওঠার জন্য জালি বা চাল কুমড়া আমাদের নিয়মিত খেতে হবে।
দৃষ্টিশক্তি বাড়েঃ আমাদের মধ্যে অনেকেরই দৃষ্টিশক্তি কম। দৃষ্টিশক্তি কম হওয়ার প্রধানত কারণ হচ্ছে ভিটামিন বি ২ না খাওয়া। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি ২ রয়েছে। আমরা যদি প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি ২ গ্রহণ করি। তাহলে আমরা দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করতে সক্ষম হব। যেহেতু এতে ভিটামিন প্রচুর রয়েছে সেক্ষেত্রে আমরা জালি বা চাল কুমড়া নিয়মিত খেতে পারি। এটা আমাদের শক্তি বাড়াবে। এছাড়াও জালি কুমড়াতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চোখের রেটিনার স্ট্রেস কমায় ও ছানি পড়া রোধ করে।
ওজন কমাতেঃ আমরা অনেকেই ওজন কমানোর জন্য প্রচুর চেষ্টা চালাচ্ছি। কারণ আমাদের ওজন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে আমরা কোনভাবে ওজন কমাতে পারছি না। ওজন কমাতে চান তাহলে আপনাকে জালি বা চালকুমড়া খেতে হবে। কেননা আমরা যেসব হাইক্যালরি যুক্ত খাবার খায় যার দরুন আমাদের ওজন বৃদ্ধি হয়।
ওইসব খাবারের বিকল্প হিসেবে আপনি জালি বা চাল কুমড়া খেতে পারেন। জালি বা চালকুমড়াতে প্রচুর আশ থাকে। চাল কুমড়া খাওয়ার পর আপনার খিদে দূর হয়ে যাবে। এ কারণে আপনি দুপুর ও রাতের মাঝখানে কোন অন্য কোন নাস্তা খাওয়ার ইচ্ছা খুব একটা অনুভব করবেন না আর সেজন্য ওজন কমবে।
আপনি যদি জালি বা চাল কুমড়া খান হাই ক্যালরি খাবারে বিকল্প হিসেবে তাহলে এটি আপনার রক্তে ব্লকের সৃষ্টি বাধা দেয় বদহজম হয় না এবং শরীর ফিটফাট থাকে।
পেটের সমস্যা দূর করাঃ আমরা অনেকেই পেটের অনেক রোগজনিত সমস্যায় ভুগি। চাল কুমড়া এসব সমস্যা থেকে আপনাকে মুক্তি দিবে। এর অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট পেট এর ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত মশলা দেয়া খাবার খেলে, দীর্ঘদিন অনাহারে থাকলে এক ধরনের এসিড উৎপন্ন হয় যা পরবর্তীতে ইনফেকশন হয়ে আলসার হয়ে যায়। আপনি যদি জালি বা চাল কুমড়ার তরকারি খান তাহলে আপনার আলসারের জন্য দায়ী এসিড দূর করতে সাহায্য করবে।
পেট ফাঁপা ও কষ্ট কাঠিন্যঃ আপনি যদি চালকুমড়ার রস পেটে ১০ থেকে ১৫ মিনিট মালিশ করলে পেট ফাঁপা ও পেসাবের সমস্যা দূর হয়ে যাবে। আর তারপর সেটিকে পুড়িয়ে গুড়া করতে হবে। গরম জলে আধা চা চামচ চাল কুমড়ার পাউডার গুলিয়ে খেলে ব্যথা কম হবে।
কৃমিনাশের জন্যঃ আমরা অনেকেই কৃমির জ্বালায় অসহ্য হয়ে যায়। এই কৃমি কম করার জন্য আমরা অনেকে ওষুধ খেয়ে থাকি। আমরা যদি প্রাকৃতিক ভাবে কৃমি দূর করতে চাই তাহলে আমাদেরকে জালি বা চাল কুমড়া খেতে হবে। ২ গ্রাম চাল কুমড়ার বীজের শাস বের করে বেটে এক গ্লাস জলে মিশিয়ে খেলে কৃমি দূর হবে।
আরো পড়ুনঃ খেসারি ডালের ৯টি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা ও অপকারিতা চলুন জেনে আসি
চাল কুমড়ার অপকারিতা সম্পর্কে যদি জানতে চান তাহলে পোস্ট টি সম্পুর্ণ পড়তে থাকুন। আমরা নিচে এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তাই আমাদের সাথেই থাকুন।
চাল কুমড়ো খাওয়ার উপকারিতা
চাল কুমড়ো বাংলাদেশের সবাই চেনে। এটি প্রায় মানুষ সবজি হিসেবে অনেক সুস্বাদু করে খেয়ে থাকে। আমরা এখানে চাল কুমড়ো খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানবো।
নিচে উপকারিতাগুলো উল্লেখ করা হলোঃ
- চাল কুমড়ার রস যদি সামান্য চিনি ও জাফরানের সাথে খাওয়া যায় তাহলে তা ফুসফুসের জন্য খুবই ভালো এবং এটি পুষ্টির অভাব কমায়।এবং আরো ছোট বড় নানা রোগের উপশম হয়।
- এই জালি বা চাল কুমড়ার বীজ থেকে তৈরি তেল পিত্তের রোগ সারায়। তবে চাল বা জালি কুমড়া তেল গুরুপাক এবং শরীরের শ্লেষ্মা তৈরি করে। তাই সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
- কচি চাল কুমড়া রক্ত পিত্ত পরিষ্কার করে এবং কফ দূর করতে সহযোগিতা করে।
- বড় পাকা চাল কুমড়া যদি হালকা খাবার যেমন সোডা বা লবণ দিয়ে সিদ্ধ করে খাওয়া যায় তবে তা হজম শক্তি দ্রুততর করে এবং খিদা বাড়ায় এমনকি মুত্রাশয় পরিষ্কার হয়।
- আমাদের যাদের খাবার অরুচি রয়েছে তাদের রুচি ফেরাতে একমাত্র চিকিৎসা হলো চালকুমড়া সাথে উচ্ছে ও সজনের ডাটা দিয়ে রান্না করা। এটি জালি বা চাল কুমড়ার শুক্তো নামে পরিচিত। এই শুক্তো খেলে আশা করা যায় মুখে রুচি তাড়াতাড়ি ফেরত আসবে। তাই মুখের রুচি ফেরাতে চাল কুমড়ার কোন বিকল্প নেই।
চাল কুমড়ার ক্ষতিকর দিক
চাল কুমড়ার ক্ষতিকর দিক কি সেটা আমাদের জানতে হবে। আমরা এ পর্যন্ত চাল কুমড়ার অনেক উপকারিতা সম্পর্কে জানলাম। এ পর্যন্ত বুঝলাম যে চাল কুমড়া খাওয়া আমাদের জন্য খুবই জরুরী। যা বিভিন্ন রোগ নিরাময় করতে আমাদেরকে সাহায্য করে। তোমরা এখন ভাবছ চাল কুমড়ার আবার কিসের ক্ষতিকর দিক রয়েছে। চলুন আমরা জেনে আসি চাল কুমড়ার ক্ষতিকর দিক গুলোঃ
- জালি বা চাল কুমড়া তে যে তেল রয়েছে তা শ্লেষ্মা তৈরি করতে পারে। তাই সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত চাল কুমড়া খাওয়ার ক্ষেত্রে।
- চাল কুমড়া খাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা যদি কচি বা বড় পাকা চাল কুমড়া খাওয়ার পরিবর্তে মাঝারি চালকুমড়া খায় তবে তা বুকে কফ তৈরি করতে ও বসে দিতে পারে। তাই খেতে সাবধান অবলম্বন করা উচিত।
চাল কুমড়া তেমন কোন অপকারিতা নেই তাই আমাদের শরীর ঠিক রাখতে হজম বাড়াতে , মন ভালো রাখতে, সুস্থ রাখতে, সব সময় চাঙ্গা রাখতে জালি কুমড়া খাওয়ার কোন বিকল্প নেই।
চাল কুমড়ার অবলেহা
চাল কুমড়ার অবলেহা বানানোর পদ্ধতি সম্পর্কে জানা আমাদের জরুরী। কেননা, আপনি যদি চাল কুমড়ার অবলেহ তিন মাস ধরে নিয়মিত খান তবে আপনার মুখমন্ডলে একটি তেজস্বী ভাব আসবে, হজম শক্তি বাড়বে। এছাড়াও জর, তৃষ্ণা, শরীর জ্বালা করা, গা বমি করা, কাশি, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, ক্ষয় রোগ, গলা ভেঙ্গে যাওয়া, স্ত্রীরোগ সবই ভালো হবে চাল কুমড়ার অবলেহা খেলে।
খুবই পুষ্টিকর নিয়মিত খেলা আপনার শরীরে বল হবে বিশেষ করে শিশুদের, বৃদ্ধদের পক্ষে শীতকালে তিন মাস ধরে খাওয়া খুবই উপকার জনক। এতে হার্ট ভালো থাকবে। সকাল সন্ধ্যা বেলায় এক টেবিল চামচ করে খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
জালি বা চাল কুমড়ার অবলেহ তৈরির পদ্ধতিঃ
- চাল কুমড়ার খোসা ও বীজ এবং নরম অংশ ফেলে দিয়ে চাল কুমড়া টুকরো করে কেটে নিন। একটু বেশি জলের সেদ্ধ করে চাল কুমড়ার রস নেঙিয়ে বের করে আলাদা করে রেখে দিন।
- এখন চালকুমড়া টুকরো গুলো গাওয়া ঘিয়ে লালচে করে ভেজে নিন। এবারে আগেকার নিংড়ে নেওয়া রস মেশাবেন। চাল কুমড়ার ওজনের সমান ভাবে চিনি দিন। অল্প পরিমাণে গুড়াপিপুল গুড়া, শুকনা আদা জিরা গুঁড়া, এলাচি গুঁড়া, ধনে গুড়া, তেজপাতা গুড়া এবং অল্প ডাল, চিনি গোঁড়া মিশিয়ে অল্প আচে ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে নাড়তে থাকুন।
- এখন নামিয়ে নিয়ে ঠান্ডা করে বেশি পরিমাণে ভালো মধু মিশিয়ে নিন। তারপর কাচের বোয়ামে ভরে রাখুন। প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যা বেলায় এক টেবিল চামচ করে খান তাহলে আপনার অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাবে। সেই সাথে এই অবলেহা আপনার মস্তিষ্কের পুষ্টি বৃদ্ধি করবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
মধু দেয়ার কারণে আপনার এই অবলেহ পচবে না। অবলেহ হতে যাতে কোনোভাবেই পানি না মিশে যায় সে দিকে লক্ষ্য রাখবেন। বোয়াম থেকে অবলেহ বের করবার জন্য শুকনা চামচ ব্যবহার করবেন। অবলেহ হতে দেওয়ার সমস্ত মসলা শুকনা তাওয়ায় অল্প ভেজে একসঙ্গে পিষে নিতে পারেন।
চালকুমড়া টুকরো যদি ১ কেজি হয় এবং চিনি ১ কেজি হয় তাহলে শুকনা আদা জিরে পিপল ১ চা চামচ করে দিবেন এবং ধনে তেজপাতা এলাচ, চীনির গুড়া ২ চা চামচ করে দিবেন। মধু দিবেন ৬ টেবিল চামচ। চাল কুমড়ার হালুয়া চাল কুমড়ার খোসা ও বীজ বাদ দিয়ে কুরাল দিয়ে করে নিন। তারপর কম আচে ঢাকা দিয়ে ঘিয়ে ভাজুন ও নরম করে নিন।
আরো পড়ুনঃ চিনিগুড়া গাছের ৬টি অজানা উপকারিতা । চিনিগুড়া গাছ খাওয়ার নিয়ম
এরপর লাউয়ের বীজের শাঁস পাকা, কুমড়ার বীজের শাঁস, খরমুজের বীজের শাঁস এবং বাদাম মাখানা সব উপকরণ অল্প পরিমাণে একসঙ্গে হামান দিস্তায় গুড়া করে নিন এগুলোও ঘিয়ে ভাজুন। ভাজা চাল কুমড়ার মধ্যে এগুলো মিশিয়ে নিন এবং আন্দাজমতো চিনি দিয়ে নাড়তে থাকুন। এইভাবে হালুয়া তৈরি করে নিন। এখন আপনার হালুয়া তৈরি করা হয়ে গেছে।
এই হালুয়া আপনি বাড়ন্ত শিশুর বৃদ্ধদেরকে খাওয়াতে পারেন। এটা তাদের জন্য খুবই উপকার হবে। যেসব মানুষ মাথা গরম প্রকৃতির। যাদের প্রসাব করার সময় জ্বালা করে, যাদের বাতে ব্যথা আছে বা যেসব মহিলাদের অতিরিক্ত রক্তস্রাবের সমস্যা আছে তারা যেন এই অবলেহা খান তবে আপনার উপকার হবে।
চাল কুমড়ার মোরব্বা
এখন আমরা জানবো চাল কুমড়ার মোরব্বা বানানোর পদ্ধতি সম্পর্কে। চলুন আমরা জেনে আসি কোন কোন পদ্ধতিতে আমরা চাল কুমড়ার মোরব্বা খেতে পারি। যা আমাদের জন্য উপকারে আসবে।
চাল কুমড়ার মোরব্বা তৈরির পদ্ধতিঃ
- একটা পাকা পুরনো শাসালো চালকুমড়া নিতে হবে। সেই চাল কুমড়ার ছাল ছাড়াতে হবে ও বীজ ফেলে দিয়ে ভেতরে নরম অংশ ছোট ছোট টুকরো করে কাটতে হবে। প্রতিটি টুকরো কাটা দিয়ে ভালো করে বেঁধে নিন। ফুটন্ত জলের সেদ্ধ করতে দিতে হবে।
- এখন সিদ্ধ হয়ে গেলে জল ঝরিয়ে কাপড়ের ওপর পেতে রাখুন যাতে একটু জলও চাল কুমড়ার গায়ে না লেগে থাকে। তারপর কাপড় দিয়ে প্রতিটা চাল কুমড়ার টুকরোকে ভালোভাবে মুছে নিন।
- এ পর্যায়ে অল্প জলে চাল কুমড়ার টুকরো ওজনের দুই গুণ চিনি দিন। তারপর রস তৈরি করে নিয়ে ঘন করে নিন। চাল কুমড়ার টুকরো রসে ফুটান। এলাচের গুঁড়া দিয়ে নামিয়ে নিন।
- ঠান্ডা হয়ে গেলে কাচের বোয়ামে চাল কুমড়া টুকরাগুলোকে ভরে রাখুন। প্রতিদিন সকালে নিয়মিত ১ বা ২ টুকরো করে খান তাহলে আপনার অন্যান্য ব্যাধির সঙ্গে প্রসব কম হওয়া থেকেও রক্ষা পাবেন।
শেষ কথাঃ চাল কুমড়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রাণপ্রিয় পাঠক মন্ডলী!! আমরা আশা করছি আপনি আর্টিকেলটি পড়ে অনেক উপকৃত হয়েছেন এবং যা জানার ইচ্ছাতে এসেছেন তা জানতে পেরেছেন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমরা পুরো আর্টিকেল জুড়ে চাল কুমড়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, চাল কুমড়ার ক্ষতিকর দিক কি কি
এবং চাল কুমড়ার মোরব্বা ও চাল কুমড়ার অবলেহা বানানোর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এ সকল বিষয় সম্পর্কে জানার পর আপনার যদি কোন মতামত বা প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে আমাদেরকে নিচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা আপনার মূল্যবান কমেন্টের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। আমরা পুরো আর্টিকেল জোরে সঠিক তথ্য আপনাকে দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
যদি এই আর্টিকেলে কোন ভুল তথ্য পেয়ে থাকেন তাহলে আমাদেরকে জানাতে ভুলবেন না। আমরা পরবর্তীতে সংশোধন করার চেষ্টা করব। আর্টিকেল পড়ে যদি আপনার মনে হয় যে আপনি উপকৃত হয়েছেন এবং অন্যদেরকে উপকৃত করতে চান। তাহলে এখনই আপনার বিভিন্ন বন্ধু-বান্ধবের নিকট আর্টিকেলটি শেয়ার করুন।
যাতে তারাও আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে চাল কুমড়ার বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারে এবং তারা চাল কুমড়া খেয়ে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারে। এটাই আমাদের কাম্য।
নবান্ন আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url