উলট কম্বল গাছের ৬টি অজানা উপকারিতা - ওলট কম্বল খাওয়ার নিয়ম
উলট কম্বল গাছের উপকারিতা ও ওলট কম্বল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে কি আপনি আগ্রহী। তাহলে এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন। আমি আপনাকে উলট কম্বল গাছের এমন ৬টি অজানা উপকারিতা সম্পর্কে জানাবো যা আমরা অনেকেই প্রায় জানিনা।
আজকে আমরা এই আর্টিকেলে উলট কম্বল গাছের উপকারিতা, ওলট কম্বল গাছ চেনার উপায়, ওলট কম্বল খেলে কি হয়, ওলট কম্বল খাওয়ার নিয়ম এবং ওলট কম্বল সম্পর্কিত আরো বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করবো। তাই চলুন বেশি দেরি না করে শুরু করা যাক আজকের আলোচনা।
পেইজ সুচিপত্রঃ উলট কম্বল গাছের উপকারিতা - ওলট কম্বল খাওয়ার নিয়ম
ওলট কম্বল গাছ চেনার উপায়
উলট কম্বল গাছের উপকারিতা সম্পর্কে জানার আগে আমাদের জানতে হবে ওলট কম্বল গাছ চেনার উপায় সম্পর্কে। আমরা যদি ওলট কম্বল চিনতে পারি তাহলেই তো তা ব্যবহার করে উপকার পাবো। আসুন প্রথমেই আমরা উলট কম্বল গাছের নাম ও তা চেনার উপায় জেনে নেই।তাহলে সহজেই আমরা উলট কম্বলের গাছ চিনতে পারবো।
উলট কম্বল গাছ এর
- ইংরেজি নামঃ Devil’s Cotton
- বৈজ্ঞানিক নামঃ Abroma augusta Linn.
ওলট কম্বল গাছ চেনার উপায়ঃ উলট কম্বল গাছ ৮ থেকে ১০ ফুট লম্বা হয়। উলট কম্বল গাছ বেশি মোটা হয় না গাছের ছালে রেশমের মতো আশ থাকে এবং ফুলের রং মেরুন হয় এবং দেখতে বেশ মনোরম লাগে। এবং এ গাছের ফল পঞ্চকোণ বিশিষ্ট লোমাবৃত্তি হয়। উলট কম্বল গাছ এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ রংয়ের এবং পেকে গেলে ধূসর বর্ণের হয়। আসুন নিচে আমরা উলট কম্বলের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই।
উলট কম্বল গাছের উপকারিতা - উলট কম্বল গাছের ডাটার উপকারিতা
উলট কম্বল গাছের উপকারিতা অনেক রয়েছে উলট কম্বল গাছ শরীরের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় একটা উপকারিতা হলো মহিলাদের সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা দূর করে এটিই গাইনোলজিক্যাল সমস্যায় চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভেষজ এর উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয় নিচে উলট কম্বল গাছ এর উপকারিতা বিস্তারিত দেওয়া হলঃ
আরো পড়ুনঃ সাবুদানা খাওয়ার ১৫টি গুরুত্বপূর্ন উপকারিতা - সাবুদানা খাওয়ার নিয়ম
১। উলট কম্বল উদ্ভিদের মূলের ছাল থেকে এক ধরনের আঠা জাতীয় রস বের হয় যা গর্ভাশয়ের শক্তি বৃদ্ধি করে বিশেষ করে যাদের বন্ধ্যাত্ব রোগ আছে তাদের ক্ষেত্রে উলট কম্বল অনেক উপকারী পাতা ও উলট কম্বল গাছ এর কান্ডের রস গনোরিয়া রোগের রোগীদের ক্ষেত্রে বেশি উপকারী।
এমনকি দীর্ঘদিন থেকে যারা অনিয়মিত ঋতুস্রাব , জরায়ু সংক্রান্ত রোগ , বন্ধ্যাত্ব ব্যথা সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত তাদের ক্ষেত্রে উলট কম্বল গাছ এর ছাল রোগ নিরময়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে ।
২। রক্ত আমাশয়ের জন্য উলট কম্বল গাছ ভালো একটা প্রাকৃতিক সমাধান । এজন্য প্রতিদিন উলট কম্বল গাছ এর পাতা পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং সকালে সেই ভিজিয়ে রাখা পানি রোগীকে পান করাতে হবে এভাবে পান করে গেলে আশা করা যায় রক্ত আমাশয় ভালো হয়ে যাবে ।
৩। এছাড়াও উলট কম্বল গাছ সর্দি , কাশি নিরাময় করতে সাহায্য করে । একই সাথে কৃমিনাশক যত রোগ আছে এবং অনিদ্রা জনিত সমস্যা , হাঁপানি ও কুষ্ঠ রোগে যারা ভুগছেন তাদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে উলট কম্বল বেশ কার্যকরি।
৪। উলট কম্বল গাছ এর যেসব ডাল আছে কচি কচি ডাল এসব ডাল যদি পানিতে ভিজিয়ে রস করা যায় সেসব রস আয়ু বল ও যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে একই সাথে যারা বার্ধক্য জনিত সমস্যায় ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে উলট কম্বল গাছ এর ডালের রস বার্ধক্য জনিত সমস্যা কমায় । এমনকি উলট কম্বল গাছ চুল পড়া রোধ করে এবং চুল ঘন এবং সবসময় কালো রাখে ।
৫। উলট কম্বল গাছে এর রস মানুষের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং উলট কম্বল গাছে এর রস ব্যবহার করলে অকালের দাঁত পড়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং চোখে চশমা দেওয়ার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায় ।
৬। উলট কম্বল গাছ আমাদের মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে। এছাড়াও জ্বর ,কৃমি , আমাশয় , সাধারণ শারীরিক দুর্বলতা এবং বায়ু আধিক্যে এটি অত্যন্ত উপকারী। এমনকি যদি কোথাও কেটে ঘা হয়ে যায় ফোড়া হয়ে যায় তাহলে উলট কম্বল গাছ এর ডাল সিদ্ধ করে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিলে তা তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়।
ওলট কম্বল খাওয়ার নিয়ম
ওলট কম্বল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানা খুব জরুরী। এখন চলুন আমরা নিচে জেনে আসি ওলট কম্বল গাছ এর কোন কোন অংশ ঠিক কোন কোন রোগের জন্য কতটুকু পরিমাণে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।
১ম ব্যবহার
রোগের নামঃ রজ কিচ্ছাতা
ব্যবহার্য অংশঃ মূলের ছাল
মাত্রাঃ ৬০ গ্রাম
ব্যবহার পদ্ধতিঃ উলট কম্বল গাছ এর মূলের ছাল প্রতিবারে ২৫০ মিলি পানিতে জাল দিতে হবে এবং যখন তা অর্ধেক হবে সেটি ছেঁকে সকালে ও বিকালে সেবন করতে হবে।
২য় ব্যবহার
রোগের নামঃ প্রসাবে জ্বালা যন্ত্রণায়
ব্যবহার্য অংশঃ পাতার ডাটা
মাত্রাঃ ৩-৪ টি
ব্যবহার পদ্ধতিঃ উলট কম্বল গাছ এর পাতার ডাটা ২৫০ মিলি পানিতে হাত দিয়ে কচলিয়ে প্রয়োজনে সামান্য চিনি মিশিয়ে সকাল ও সন্ধ্যায় সেবন করতে হবে।
৩য় ব্যবহার
রোগের নামঃ প্রদর
ব্যবহার্য অংশঃ মূলের ছাল চূর্ণ
মাত্রাঃ ২৫০ মিলি
ব্যবহার পদ্ধতিঃ উলট কম্বল গাছ এর মূলের ছাল চূর্ণ সকাল সন্ধ্যায় খালি পেটে পানি সহ সেবন করতে হবে।
৪র্থ ব্যবহার
রোগের নামঃ জরায়ুর স্থান চ্যুতি
ব্যবহার্য অংশঃ তাজা মূলের ছাল
মাত্রাঃ ৫গ্রাম
ব্যবহার পদ্ধতিঃ উলট কম্বল গাছ এর তাজা মূলের ছাল পিষে নিয়ে সেটি পানিতে মিশিয়ে সকাল ও সন্ধ্যায় সামান্য চিনি সহ সেবন করতে হবে।
সতর্কতাঃ অধিক সেবনে এলার্জি দেখা দিতে পারে।
ওলট কম্বল খেলে কি হয়
ওলট কম্বল খেলে কি হয় এরকম অনেক প্রশ্ন মানুষ করে থাকে। ওলট কম্বল খেলে আসলে কি কোন ক্ষতি হয় নাকি উপকার রয়েছে। আমরা আজকে এখানে ওলট কম্বল খেলে কি হয় সে সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।
আরো পড়ুনঃ চিচিঙ্গা খাওয়ার ১৮টি কার্যকরী উপকারিতা - চিচিঙ্গার অপকারিতা
তাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন। ওলট কম্বলের প্রচুর পুষ্টি উপাদান রয়েছে এবং অনেক উপকারিতাও রয়েছে। আমাদের শরীরে অনেক উপকার করে থাকে এই ওলট কম্বল। নিচে ওলট কম্বল খেলে কি হয় সে সম্পর্কে উল্লেখ করা হলোঃ
ওলট কম্বল গাছের ছাল, ডাটার রস, শিকড় বলতে গেলে ওলট কম্বল গাছের পুরোটাই ঔষধি কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে ওলট কম্বল গাছে অনেক উপকার রয়েছে এবং অনেক চিকিৎসাতে ব্যবহার করে থাকে। ওলট কম্বলের রস গনোরিয়া রোগে বিশেষ উপকার পাবেন। যেসব নারীরা অনিয়মিত ঋতুস্রাব এর সমস্যা, ঋতুস্রাব নির্দিষ্ট পরিমানের কম হয়ে থাকে
তাদের ক্ষেত্রে উলট কম্বল ভালো কাজ করবে। ওট কম্বলের পাতার ডাটা সিদ্ধ বের করে যদি আপনি খান তাহলে প্রসাবের জ্বালাপোড়ার উপকার পাবেন। এমনকি বিভিন্ন বন্ধাত্য জাতীয় রোগের এবং ব্যথা নিরাময়ের উপকারী। এমনকি ডিহাইড্রেশন থেকে মুক্ত থাকতে উলট কম্বলের রস খেতে পারেন। ওলটকম্বল আপনি গবাদি পশু কেউ খাওয়াতে পারেন
পাতলা পায়খানা, বিলম্ব প্রজনন, এমনকি হাঁস মুরগির বিভিন্ন চিকিৎসায় এটি ব্যবহার করতে পারেন। ওলট কম্বল খাওয়ার অপকারিতা তেমন কোন নেই। এতে প্রচুর উপকারিতা রয়েছে আপনি এটি বিভিন্ন চিকিৎসায় ব্যবহার করতে পারেন। আশা করা যায় আপনি উপকার পাবেন।
ওলট কম্বল গাছ কোথায় পাওয়া যায়
ওলট কম্বল গাছ কোথায় পাওয়া যায়? এ নিয়ে অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন। এখানে আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো তাই সাথেই থাকুন। আপনি আশপাশের অনেক জায়গায় পাবেন। যদি আপনি গ্রামে বসবাস করে থাকেন তাহলে দেখবেন আশেপাশে অনেক জায়গায় এই গাছ রয়েছে। ওলট কম্বল গাছ চেনার উপায় এর সাথে মিলিয়ে দেখে নিবেন।
ওলট কম্বল গাছ ৮ থেকে ১০ ফুট লম্বা হয়, সেহেতু আপনি সহজেই তাকে দেখতে পাবেন বেশি কষ্ট করতে হবে না। আর বিশেষ করে ওলট কম্বল গাছের ফল দেখে আরো ভালোভাবে চিনতে পারবেন। পঞ্চকোন বিশিষ্ট লোমাবৃতি ফল অন্য কোন গাছে হয় বলে আমার জানা নেই। তাই আপনি খুব ভালোভাবে এটি চিনতে পারবেন।
এই গাছের ডাটা আপনি রস করে খেতে পারবেন এবং এর শিকড় বিভিন্ন ঔষধি গাছ ব্যবহার করতে পারবেন। এখন যদি আপনি শহরে থাকেন গ্রাম অঞ্চলে না থাকে তাহলে আপনি বিভিন্ন বাজারে এটি কিনতে পারেন। এর শিকড় আর ডাটা আপনি আলাদাভাবে কিনতে পারবেন।
এমনকি এই গাছের গুড়াও কিনতে পারেন। বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আপনি দেখবেন যে গুড়া বিক্রি হচ্ছে। এমনকি শিকড় বিক্রি হতে পারে। আপনি খোঁজ করবেন তাহলে জানতে পারবেন।
শেষ কথাঃ উলট কম্বল গাছের উপকারিতা - ওলট কম্বল খাওয়ার নিয়ম
প্রাণপ্রিয় পাঠক মন্ডলী!! আশা করছি আপনি যে বিষয় সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন তা জানতে পেরেছেন. আমরা আজকে এই আর্টিকেলে ওলট কম্বল গাছের উপকারিতা, ওলট কম্বল খাওয়ার নিয়ম, ওলট কম্বল গাছ কোথায় পাওয়া যায়, উলট কম্বল গাছের ডাটার উপকারিতা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।
আর্টিকেল পড়ার পর যদি আপনার মনে কোন প্রশ্ন বা মতামত থেকে থাকে তাহলে আমাদেরকে জানাতে পারেন। আমরা আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। আমরা পুরো আর্টিকেল জুড়ে সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। যদি এই আর্টিকেলে কোন ভুল ধরা পড়ে থাকে তাহলে আমাদেরকে জানাতে পারেন আমরা তা পরবর্তীতে সংশোধন করার চেষ্টা করবো।
এই আর্টিকেল পড়ার পর যদি উপকৃত হয়েছেন বলে মনে করে থাকেন এবং অন্যদেরকে উপকৃত করতে চান তাহলে আপনার বিভিন্ন বন্ধু-বান্ধবের নিকট এই আর্টিকেলটি শেয়ার করতে পারেন যাতে তারা উলট-কম্বল গাছের উপকারিতা জেনে উপকৃত হতে পারে। এটাই আমাদের কাম্য।
নবান্ন আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url