পাট শাকের ১২টি কার্যকরি উপকারিতা ও অপকারিতা

সোনালী আঁশ নামে পরিচিত পাট বাংলাদেশের খুবই পরিচিত একটি গাছ। এই গাছেরই পাতা কে আমরা পাট শাক বলে থাকি। পাটশাক মিষ্টি ও তেতো দুরকমই পাওয়া যায়। পাট জাতীয় উদ্ভিদ গুলো খাদ্য ও ওষুধ হিসেবে সমান ভাবে কার্যকর ও নিরাপদ।

তাই আজকে আমরা পাট শাকের পরিচয়, চেনার উপায়, পাট পাতার ব্যবহার, পাট শাকের উপকারিতা, অপকারিতা এবং পাটশাকের বিভিন্ন রেসিপি সম্পর্কে জানব।

পাট শাক

পাট একটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ। বিশ্বের অনেক জায়গায় পাট উৎপন্ন হয়। তারমধ্যে বাংলাদেশ ভারত ও চীন উল্লেখযোগ্য। পাট গাছ পাট উৎপাদনে চাষ করা হয় যদিও তার কচি পাতা সবজি হিসেবে খাদ্যে ব্যবহার করা হয়। বাজারে দুই ধরনের পাট শাক পাওয়া যায় এক ধরনের হচ্ছে মিষ্টি আর এক ধরনের তেতো।

পাট শাক ক্রূশিয়াস প্রজাতির শাক হওয়ায় এটি ব্রকলি, বাঁধাকপি, ফুলকপি এ জাতীয় অন্যান্য সবজির মতো শরীরে ডিটক্সিফাইয়ের কাজ করে। এই প্রজাতির শাকসবজি ক্যান্সার প্রতিরোধ ভূমিকা রাখে।

পাট শাক চেনার উপায়

পাট শাকের পাতা সাধারণত ২ থেকে ৪ ইঞ্চি লম্বা হয়। চওড়ায় ২ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। পাতার কিনারা করাতের মত খাচ কাটা থাকে। এবং আগের দিকটা বেশ সরু হয়। বোঁটা ২ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। এক জায়গায় ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ফুল ফোটে। ফুলের বোঁটাও ছোট হয়। পাপড়ি পীতবর্ণের হয়। পাটের শুকনা পাতাকে "নলতা" বলা হয়।

পাটশাকের পুষ্টিগুণ

পাটশাকে প্রচুর পুষ্টিগুণ রয়েছে। যা আমাদের শরীরের ক্ষেত্রে খুবই উপকারী। পাটশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, অ্যালকালয়েড, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, প্রোটিন, লিপিড, কার্বোহাইড্রেট এবং ফলিক এসিড। এই পাটশাকে অন্যান্য শাকের তুলনায় ক্যারোটিনের পরিমাণ বেশি থাকে। এখন আমরা পাট শাকের পুষ্টিগণের তালিকা সম্পর্কে জানব।

প্রতি ১০০ গ্রাম পাটশাকে রয়েছেঃ

পুষ্টি উপাদান পরিমাণ
ক্যালোরি ৪৫ কিলো ক্যালরি
মোট চর্বি ০.৪ গ্রাম
সোডিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম ২৫৮ মিলিগ্রাম
কার্বোহাইড্রেট ৯ গ্রাম
ডায়েটারি ফাইবার ২.৮ গ্রাম
চিনি ১ গ্রাম
প্রোটিন ৩.৮ গ্রাম
ভিটামিন এ ৭৫৪৪ আই ইউ
ভিটামিন ৮৭ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম ১৭২ মিলিগ্রাম
আইরন ৫.৫ মিলিগ্রাম

সারা বিশ্বে পাট পাতার বিভিন্ন ব্যবহার

সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই পাটের পাতা কে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে থাকে। গবেষণা থেকে জানা যায় যে, শুষ্ক পাটের পাতা চা এর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

  • ফিলিপাইনে সাধারণত বাশের অনঙ্কুর ও অলিটোরিয়াসের জাতের পাটের পাতা একসাথে মিশিয়ে শাক হিসেবে খাওয়া হয়।
  • উত্তর আফ্রিকায় ও মধ্যপ্রাচ্যে মালুখিয়া নামে পরিচিত কচি পাতা সবুজ শাক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • লেবানন, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, জর্ডান এবং তিউনিশিয়ায় এই পাট পাতা রান্নাতেও ব্যবহার করা হয়।
  • তুরস্ক এবং সাইপ্রাসে পাট পাতা মলোকখিয়া নামে পরিচিত যা কিনা না মোলোচা হিসেবে এক ধরনের মুরগির  স্টূ রান্না করতে ব্যবহৃত হয়।
  • মিশরে ফেরাউন এর সময় থেকে পাট পাতা একটি প্রধান খাবার হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।
  • জাপানে পাটের শুকনো পাতা কফি এবং চায়ের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
  • ইউরোপের স্যুপ তৈরিতে পাটের পাতা ব্যবহার করা হয়।
  • নাইজেরিয়ায় পাট পাতা ও শুকনো মাছ দিয়ে ইয়েডু নামের স্যুপ খাওয়া হয়।
  • মিশরে পাট পাতা কুচিয়ে তার মধ্যে লেবুর রস ও অলিভ অয়েল দিয়ে খাওয়া হয়। এর নাম মুলুখিয়া।

পাট শাকের উপকারিতা

আমরা এ পর্যন্ত পাট শাক চিনলাম। এখন আমার পাট শাকের উপকারিতা সম্পর্কে জানবো। পাট শাকের প্রচুর উপকারিতা রয়েছে যা আমাদের শরীর এর প্রচুর রোগ নিরাময় করে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে পাট গাছের গুন অসাধারণ মূল্য। বিশেষ করে পাতা ও বীজ নৃতাত্ত্বিক ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

 পাট পাতা শারীরিক অসুস্থতা যেমন রেচন বা কোষ্ঠকাঠিন্য, মাথাব্যথা, চিকেন পক্স বা গুটি বসন্ত ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং গুঁড়ো কৃমির চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এমনকি পাট পাতা ত্বকের জন্য প্রসাধনের এবং চুলের জন্য কন্ডিশনার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। তাই আসুন বেশি দেরি না করে পাট শাকের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই।

ক্যান্সার প্রতিরোধ

বর্তমানে সারা বিশ্বে ক্যান্সার খুবই মারাত্মক প্রাণঘাতী রোগ। এ রোগ থেকে বাঁচতে হলে আমাদেরকে বেশি করে পাট শাক খেতে হবে। পাট গাছের পাতা ও ফল খেলে বিশেষত গ্যাস্ট্রোইলটেস্টাইনাল এলাকায় ক্যান্সার হ্রাস পায়। গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয় যে, গরম জলে সিদ্ধ পাট পাতার জুস এন্টি টিউমার গঠিতকারী উপাদানের সক্রিয়তা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং গরম জল সিদ্ধ পাট পাতার জুস টিউমার বর্ধিত কারী রাসায়নিকের বিরুদ্ধে খুব কার্যকরী। এমনকি অনেক পর্যবেক্ষকরা লক্ষ্য করেছেন, পাতার নির্যাস উচ্চমাত্রায় ফেনল উপাদান এবং ফ্রি রেডিক্যাল এক প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত । পাট শাকে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো মেলানোমা, প্রোস্টেট এবং ব্রেস্ট ক্যান্সার সহ কিছু ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে পাটশাকের অবদান অনেক। পাট শাকে উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম লবন থাকায় রক্ত সঞ্চালন ও রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। এর জন্য উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা দূর হয়। তাছাড়া পাট বীজ থেকে কর্চোরি, কর্কোরজেনিন, ক্যাপসুলারিন, কর্কোরিটিন, অলিটোরিসাইড, কর্কোশুলারিন এবং কর্কোটক্সিন নামক বেশ কিছু জৈব যৌগ পাওয়া যায়।

আহরিত এই জৈব যৌগ কার্ডিওটোনিক ওষুধ হিসেবে কাজ করে। পাট শাক রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে এবং নিয়মিত পাট শাক খেলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।

হাড়ের ক্ষয় রোধে

আমাদের মধ্যে যাদের হাড়ের ক্ষয়জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের এই সকল সমস্যা দূর করতে পাট শাকের কোন বিকল্প নেই। পাট শাকে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম ও অন্যান্য উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে এটি হাড় গঠন করতে এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে। আয়রন ও সোডিয়াম হার গঠন ও ক্ষয় পূরণ করে হাড়ের ভঙ্গরতা রোধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

হজম শক্তি বাড়ায়

আমাদের মধ্যে অনেকেরই হজম জনিত সমস্যা হয়ে থাকে। সেই দরুন আমরা অনেক চিন্তিত হয়ে থাকি আপনি যদি আপনার হজম শক্তি বাড়াতে চান তাহলে নিয়মিত পাট শাক খান। কেননা পাট শাকে প্রচুর ফাইবার রয়েছে এবং খাদ্যআশ রয়েছে যা হজম করতে সহায়তা করে এবং হজম শক্তি বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যর রোগ দূর হয়। এমনকি পাটশাক আপনার খাবার রুচি উন্নত করতে সাহায্য করে। 

অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে শরীর রক্ষায়

গবেষকরা লাইকোপিন নামক একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাট শাকে পেয়েছে যা খেলে শরীরে সৃষ্ট প্রদাহ কমে এবং অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে শরীরের কোষগুলোকে রক্ষা করে। একটি ঢাকনাযুক্ত পাত্রে ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম কচি পাট পাতা কুচি কুচি করে কেটে ১৭০ মিলিমিটার পানিতে সিদ্ধ করে ৪০ থেকে ৫০ মিলিলিটার পরিমাণ হলে নামিয়ে ঠান্ডা করতে হবে। ঠান্ডা ঘন সুপটুকুই রোগীকে একসাথে খাইয়ে দিতে হবে। দিনে দুইবার করে তিন দিন খেলে জ্বর কমে যাবে ।

অন্ত্রের রোগ নিরাময়

পাট শাক আপনার খাওয়ার রুচি বাড়িয়ে তুলে এবং মুখের স্বাদ ফিরিয়ে আনে। এমনকি মেদবৃদ্ধি আশঙ্কাও কমায়। পাট শাক এর তেতো স্বাদ মুখের লালা ক্ষরণ বৃদ্ধি করে কার্বোহাইড্রেটকে ভাঙ্গতে সাহায্য করে হজমে সহায়তা করে।

পাট পাতাতে ঔষধি গুনাগুন থাকার কারণে এটি তিক্ত টনিক হিসেবে পাকস্থলী প্রশমক, কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকারক, পাকস্থলী ও বায়ু নাশক বা রক্তনালীর সংকোচক রোধক এবং অন্ত্রের অ্যান্টিসেপটিক ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। প্রাচীন ভারত বর্ষীয়রা পাট গাছকে ছাই করে মধুর সাথে মিশে অন্ত্র পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করে।

 পাতার গুড়া, ৫ থেকে ১০টি বীজ দানা, গুড়া হলুদের সাথে সমান অংশে মিশিয়ে আমাশা নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। দেখা গেছে ১ গ্রাম পাট পাতা শুকনা আধাকাপ পানিতে ভিজিয়ে কিছুক্ষণ পরে পাট পাতার পানি ছেকে খেলে আমাশয় রোগ ভালো হয়। তাছাড়া ১.৫ গ্রাম পরিমাণ পাট পাতার গুড়া ভাতের সাথে খেলে বারবার টয়লেটে যাওয়া অনেক খানি কমে যায়। 

এছাড়াও ১ গ্রাম পাতা গুড়া এবং ১ গ্রাম হলুদ গুঁড়া একসাথে মিশিয়ে ঠান্ডা পানির সাথে দিনে দুইবার করে খেলে রক্ত আমাশয় ভালো হয়। গবেষণায় প্রমাণিত যে। ১.৫ থেকে ২ গ্রাম পাটের বীজের গুড়া এক চামচ মধু ও সিকি চামচ আদার রস একসাথে মিশিয়ে সামান্য ঠান্ডা পানির সাথে তিন ঘন্টা পর পর খেলে পেট খারাপ ভালো হয়।

শুকনো গুড়া পাটের পাতা ২ গ্রাম ও ১ গ্লাস কুসুম কুসুম গরম পানির সাথে সকালে বাসি পেটে খেলে কোষ্ঠ পরিষ্কার হয়। ৫০ মিলিলিটার গরম পানিতে ২ গ্রাম পাট পাতা সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেঁকে নিয়ে খালি পেটে খেলে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই লিভারের দোষ ভালো হয়।

অন্য এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০ থেকে ২৫ মিলি টাটকা কচি পাতার রস আধা কাপ পানিতে মিশিয়ে সামান্য গরম করে একবার সকালে ও আর একবার বিকেলে খেলে অগ্নি মন্দা ভালো হয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

মানবদেহে বিভিন্ন রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে। এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিভিন্ন ফরমালিনযুক্ত খাবার খাওয়ার কারণে কমে যায়। আমরা যদি এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা না বাড়ায় তাহলে বিভিন্ন রোগ আমাদের শরীরে আক্রমণ করবে।

 তাকে বাধা দেওয়ার মতো কোনো ক্ষমতায় আমাদের শরীরের অবশিষ্ট থাকবে না। পাট শাকে এমন কিছু ভিটামিন রয়েছে যার দরুন আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। পাট শাকে রয়েছে ভিটামিন এ, ই এবং সি যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

 এতে থাকা ভিটামিন সি ও ক্যারোটিন মুখের ঘা দূর করতে সাহায্য করে। তাছাড়া শ্বেত কণিকা বৃদ্ধি করে ভিটামিন সি। এবং চোখ ও হৃদপিণ্ড সহ অন্যান্য অঙ্গের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ই।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে

উচ্চ রক্তচাপ বা স্টোক, হার্ট অ্যাটাক এ সকল প্রাণঘাতই আমাদের জীবনের একটি কমন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ধরনের প্রাণঘাতী রোগ থেকে মুক্তি পেতে গেলে আমাদেরকে পাট শাক নিয়মিত খেতে হবে। কেননা পাটশাকে বিদ্যমান রয়েছে উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম যা রক্ত সঞ্চালন ও রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। ফলে উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা দূর হয়। এছাড়াও পাট শাকে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যার দরুন রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে। যদি আমরা নিয়মিত পাট শাক খায় তাহলে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুকি কমানো সম্ভব হবে।

বাতের ব্যথা দূর করে

বয়স্কদের জন্য বাত ব্যথা একটি কমন রোগ। আমরা কেউই বাত ব্যথার রোগী হতে চাই না। যদি আমরা কম বয়সে বাত ব্যথার রোগী হওয়া থেকে বাঁচতে চাই তাহলে আমাদেরকে নিয়মিত পাট শাক খেতে হবে। কারণ আপনি জানলে অবাক হবেন পাট শাকে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা বাত ব্যথাতে বেশ কার্যকরী। 

পাট শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই থাকে। এবং ভিটামিন ই গেটে বাত, আর্থ্রাইটিস এবং প্রদাহ জনিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাই যদি আমরা সকল ধরনের বাত ব্যথা জনিত রোগ থেকে বাঁচতে চাই তাহলে আমাদেরকে নিয়মিত পাট শাক খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করা উচিত।

নিদ্রাহীনতা দূর করে

আমাদের মধ্যকার অনেকেই ঘুম না আসার কারণে চিন্তিত। আমরা অনেকেই ঘুমানোর জন্য ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে থাকি। কিন্তু এই ঘুমকে নিশ্চিন্ত করতে, নিরবিচ্ছিন্ন নিদ্রা নিশ্চিত করতে আমাদেরকে পাট শাক খেতে হবে। কেননা পাট শাকে থাকা ম্যাগনেসিয়াম উপাদান শরীরে প্রয়োজনীয় হরমোন উৎপাদন করে। 

যা স্নায়ুতন্ত্র শান্ত রাখে এবং নিরবিচ্ছিন্ন ঘুমাতে সাহায্য করে। তাই আপনি যদি মনে করেন আপনার নিদ্রাতে সমস্যা রয়েছে ভালোভাবে ঘুমাতে পারেন না তাহলে ভালো ঘুমের জন্য পাট শাক খেতে পারেন।

লিভারের দোষে

সন্ধ্যাবেলায় ২ গ্রাম পাট পাতা ৫০ মিলি লিটার গরম পানিতে ভিজিয়ে পরের দিন সকালবেলা পরিষ্কার পাতলা কাপড়ে পানিটা ছেকে নিয়ে খালি পেটে খেলে মাত্র ৭ দিনেই ফল বোঝা যাবে। রোগীর অবস্থা বুঝে সাতদিন খাবার পর আরও সাত দিন খাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

মূত্রাশয়ের রোগে পাট শাক

আমাদের অনেকেরই পেশাব জনিত সমস্যা থেকে থাকে। পেশাব ভালোভাবে হয় না, পেশাব ফোটা ফোটা হয় এসব সমস্যার সমাধানের জন্য আমাদেরকে পাট শাক খেতে হবে। যদি আমাদের পেশাব সাধারন ঘোলা পানির মতন ঘোলাটে হয়, পেশাবের বেগ থাকলেও ফোটা ফোটা পেশাব হয় এ অবস্থায় আমাদেরকে ৫০ মিনিটের গরম পানিতে ২ গ্রাম শুকনা পাটের পাতা ভিজিয়ে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা বাদে এসে খেলে প্রসাবের রোগ উপকার হবে।

পাট শাকের অপকারিতা

পাট শাক খুবই স্বাস্থ্যকর সবজি। এতে প্রচুর ভিটামিন ও গুণাগুণ রয়েছে। কিন্তু প্রত্যেক স্বাস্থ্যকর জিনিসেরও কিছু ক্ষতিকর দিক থাকে। কিছু অপকারিতা রয়েছে নিম্নে সেগুলো উল্লেখ করা হলোঃ

পাট শাকের গ্যাস উৎপন্নঃ কিছু মানুষের পাট শাকের খাওয়ার পরে গ্যাস উৎপন্ন হতে পারে যা বহুদূর কারণে অস্বস্তিকর হতে পারে।

ক্যালসিয়াম অভাবঃ পাট শাকে অনেক ক্যালসিয়াম থাকে কিন্তু সামগ্রিকভাবে একটি ক্যালসিয়াম সূত্র হিসেবে তা ব্যবহার করা যায় না ক্যালসিয়ামের অভাব হতে পারে।

পাট শাকে এলার্জিঃ যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে সেসব মানুষের ক্ষেত্রে পাট শাক খেলে এলার্জির প্রতিকার দেখা দিতে পারে। এর ফলে ত্বকে চুলকানো, ত্বক গলানো, চোখ চুলকানো এবং স্বাস্থ্যন্ত্রের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

পাট শাকে যুক্তিযুক্ত পানি অভাবঃ পাট শাক খাওয়ার পরে কিছু মানুষের পানিতে যুক্তিযুক্ত অভাব হতে পারে ।

সাধারণত পাট শাক খুবই উপকারী ও স্বাস্থ্যকর একটি সবজি। পাট শাকে তেমন কোনো অপকারিতা থাকে না মাঝে মাঝে কেউ এই সমস্যাগুলো সম্মুখীন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।

পাট শাক খাওয়ার পব্ধতি

পাট শাক খাওয়ার অনেক পদ্ধতি আছে। বিশেষত বাংলাদেশ এ ঝোল আকারে অথবা শুপে ব্যবহৃত হয়। নিচে কিছু পাট শাক খাওয়ার পদ্ধতি এবং বানানোর পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ

প্রথম রেসিপি

মিষ্টি পাট শাকের ঝোল বানানোর নিয়ম

**যা লাগবে**

১। মিষ্টি পাট শাক = দুই মুঠ

২। রসুন = ১২ কোয়া

৩। শুকনো লঙ্কা = ১ টি

৪। পাঁচফোড়ন = ১ চা চামচের ৪ ভাগের ১ ভাগ

৫। হলুদ গুঁড়ো = আধা চা চামচ

৬। লবণ = স্বাদ অনুযায়ী

৭। চিনি = ১ চা চামচ

**যেভাবে বানাবেন**

➡প্রথমে পাটশাক ছোট করে কেটে বেছে ধুয়ে নিন এবং জল ঝরিয়ে দিন।

➡কড়াইয়ে তেল গরম করে তাতে শুকনো লঙ্কা পাঁচফোড় ও রসুন খেত করে দিয়ে দিন।

➡সুগন্ধ বেরোলে পাট সাত দিন নুন ও হলুদ দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দ... এ রান্নায় একটু বেশি করে রসুন ব্যবহার করতে হবে।

➡পাঁচ মিনিট পর ঢাকনা খুলে দেখুন শাকের জল বেরিয়েছে কিনা। বেরোলে ঢাকনা খুলে দিন।

➡জল শুকিয়ে নিন

➡পাট শাক সিদ্ধ হয়ে গেলে হালকা গরম জল এক কাপ দিন। ফুটে উঠলে চিনি দিয়ে দিন।

➡সমস্তটা ভালোভাবে মিশিয়ে গ্যাস বন্ধ করে দিন।

এখন তৈরি হয়ে গেল আপনার মিষ্টি পার্ক শাকের ঝোল। এটা খেতে খুবই সুস্বাদু ও মজাদার। আপনারা বাড়িতে ট্রাই করে খেয়ে দেখতে পারেন।

দ্বিতীয় রেসিপি

কাঁঠাল বিচি ও পাট শাক ভাজা

**যা লাগবে**

১। পাট শাক = ২ আঁটি

২। পরিষ্কার করা কাঁঠালের বিচি = ১০ থেকে ১৫ টি

৩। নারকেল বাটা = ২ টেবিল চামচ

৪। চিংড়ি মাছ = ২ টেবিল চামচ

৫। পেঁয়াজ কুচি = ২ টেবিল চামচ

৬। রসুন কুচি = ১ চা চামচ

৭। কাঁচা মরিচ ফালি = ৪ থেকে ৫ টি

৮। বোম্বাই মরিচ কুচি = অর্ধেক

৯। হলুদ গুঁড়া = আধা চা চামচ

১০। লবণ = স্বাদমতো

১১। তেল = প্রয়োজনমতো

**যেভাবে বানাবেন**

➡ কাঁঠালের বিচি পরিষ্কার করে পাতলা করে কাটুন। পাট শাক ধুয়ে পানি ঝরিয়ে কুচি করে নিন।

➡কড়ায়ে তেল দিন। একে একে পেঁয়াজ কুচি, নারকেল বাট্‌ চিংড়ি মাছ, হলুদ গুঁড়া ও লবণ দিয়ে কষিয়ে নিন।

➡কষানো হলে কাঁঠালের বিচি ও আধা কাপ পানি দিন। বিচি সেদ্ধ হলে কাঁচামরিচ ও বোম্বাই মরিচ দিয়ে নাড়ুন।

➡সব মসলা মিশে ভাজা ভাজা হলে নামিয়ে ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

তৃতীয় রেসিপি

পাট শাকের ঘন্ট

**যা লাগবে**

১। পাট শাক দুই আটি

২। মসুর ডাল এক কাপ

৩। পেঁয়াজকুচি 2 টেবিল চামচ

৪। কাঁচামরিচ চ্যাট থেকে পাঁচটা ফালি

৫। রসুন কুচি তিন থেকে চার কোয়া

৬। হলুদ গুড়া সামান্য

৭। বোম্বাই মরিচ একটি

৮। লবণ প্রয়োজনমতো

৯। তেল প্রয়োজনমতো

**যেভাবে বানাবেন**

পাট ধুয়ে ছোট ছোট করে কেটে নিতে হবে। ডাল ধুয়ে ২ কাপ পানি, এক কোয়া রসুনকুচি, কাঁচা মরিচ ফালি, হলুদ গুঁড়া ও লবণ দিয়ে চুলায় দিতে হবে। ডাল সেদ্ধ হয়ে এলে পাট শাক দিতে হবে। পাট শাক ও ডাল সেদ্ধ হয়ে মাখামাখা হলে অন্য একটি কড়ায়ে তেল পেঁয়াজ কুচি, রসুনকুচি দিয়ে ভাজতে হবে। ভাজা হলে পাট শাকসহ ডাল আস্তে আস্তে কড়াইয়ে ঢেলে দিতে হবে। বোম্বাই মরিচ টুকরা করে শাকে দিয়ে কিছুক্ষণ চুলায় রেখে নামিয়ে পরিবেশন করা যায় মজাদার পাট শাকের ঘন্ট। এই ঘণ্টটি মিষ্টি অথবা তেতো পাট শাক একই পদ্ধতিতে রান্না করা যায়

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নবান্ন আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url