ঢেঁড়সের ১৩টি উপকারিতা ও অপকারিতা । ঢেঁড়স খেলে কি এলার্জি হয়
ঢেঁড়সের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে যদি জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি খুবই ধৈর্য সহকারে মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। তাহলে আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। ঢেঁড়স খুবই পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর সবজি। ঢেঁড়সে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল, আয়রন এবং উচ্চ পরিমাণের ফাইবার।
ঢেড়সকে বাংলাদেশে অনেকে ভেন্ডি নামে চিনে থাকেন। আজকে আমরা এই আর্টিকেলে এর উপকারিতা অপকারিতা এবং ঢেঁড়স সম্পর্কিত আরো নানা প্রশ্নের উত্তর দেব। তাই ধৈর্য সহকারে সাথেই থাকবেন। তাই আসুন দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক আজকের আলোচনা।
পেইজ সুচিপত্রঃ ঢেঁড়সের উপকারিতা ও অপকারিতা । ঢেঁড়স খেলে কি এলার্জি হয়
ঢেঁড়সের পুষ্টিগুণ
ঢেঁড়স আমাদের দেশের সবজি হিসেবে খুবই পরিচিত প্রচুর পুষ্টিউপকরণ রয়েছে। এতে ফাইবার, মিনারেল, ফলিক এসিড, ক্যারোটিন, অ্যামাইনো এসিড, অক্সালিক এসিড, নিয়াসিন রয়েছে। নিচে ঢেঁড়সের পুষ্টিগুণের একটি তালিকা দেওয়া হল।
প্রতি ১০০ গ্রাম ঢেঁড়সে রয়েছেঃ
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
শর্করা | 7.6 গ্রাম |
শক্ | ১৪৫ কিলো ক্যালর |
প্রোটিন | ২.০ গ্রাম |
স্নেহ পদার্থ | ০.১ গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ৭৫ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ৫৭ মিলিগ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | ৬.৪ গ্রাম |
ভিটামিন এ | ৮৮ এ আই ইউ |
নিকোটিনিক অ্যাসিড | ০.৬ মিলিগ্রাম |
লোহা | ১.৫ মিলিগ্রাম |
পটাশিয়াম | ১০৩ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন সি | ১৩ মিলিগ্রাম |
রিবোফ্ল্যাবিন | ০.১ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ৫৬ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন কে | ৫৩ মাইক্রগ্রাম |
ফলেট বি৯ | ৮৭.৮ মাইক্রগ্রাম |
ঢেঁড়সের উপকারিতা
ঢেড়স বা ভিন্ডি আমরা সবজি হিসেবে অনেকেই পছন্দ করি। কিন্তু আপনি কি জানেন ঢেড়সে কত পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা রয়েছে? আমরা ইতিমধ্যেই জানলাম ঢেঁড়সে কি কি পুষ্টিগুণ রয়েছে। চলুন এখন জেনে আসি ঢেঁড়সের উপকারিতা সম্পর্কে যা আমাদের সকলের জেনে থাকা উচিত। যাতে আমরা সেই উপকার গুলো পাওয়ার জন্য ঢেঁড়স নিয়মিত খাবার তালিকায় রাখতে পারি। আসুন দেরি না করে শুরু করি ঢেড়সের উপকারিতার তালিকা।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ঢেঁড়স
ডায়াবেটিস আজকের দিনে প্রায় সব মানুষেরই একটি কমন রোগ। আমরা অনেকেই ডায়াবেটিস নামক রোগের জ্বালায় অতিষ্ঠ। আমরা ডায়াবেটিস থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য অনেকেই ডায়াবেটিসের ওষুধ খেয়ে থাকে। কিন্তু আপনি যদি প্রাকৃতিকভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনতে চান তাহলে ঢেঁড়স আপনার সে আশা পূরণ করে দেবে।
আরো পড়ুনঃ পাট শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা
ঢেঁড়স রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে ও ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। গবেষণা অনুযায়ী দেখা গিয়েছে, আপনি যদি প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ টা ঢেঁড়শ খান তাহলে আপনার শরীরে ইনসুলিন এর উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং রক্তের শরকরের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ঢেঁড়সে গ্লাইসেমিক সূচক কম থাকায় এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।
ঢেঁড়সে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং লোহা সমৃদ্ধ উপাদান যা স্নায়ুতনত্র সতেজ রাখতে সাহায্য করে। তাই আপনি যদি প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তাহলে ঢেঁড়স আপনার খাবার তালিকায় জায়গা করে নেওয়ার জন্য উপযুক্ত।
ওজন নিয়ন্ত্রণে ঢেঁড়স
আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছে যারা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগছেন। তারা বিভিন্ন উপায় খুজছেন ওজন কমানোর জন্য এবং অনেক উপায় ব্যবহার করছেন কিন্তু তা কাজে লাগছে না। কিন্তু আপনি যদি ঢেড়স খান তাহলে তা ওজন নিয়ন্ত্রণের খুবই কার্যকরী। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা আপনার পেট দীর্ঘ সময় ধরে ভরে রাখতে এবং ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করবে।
এর ফলে আপনার অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার কোন আগ্রহ জাগবে না যার ফলে আপনার ওজন বাড়ার সংখ্যা কম হবে। ঢেঁড়সের ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম সেহেতু এটি আপনি নির্দ্বিধায় আপনার ডায়েট মেনুতে রাখতে পারেন।
কোলেস্টেরল কমাতে
কোলেস্টেরল কমাতে ঢেঁড়স খুবই কার্যকরী। ঢেড়সের মধ্যে থাকা সোলিবল ফাইবার রক্তের LDL কোলেস্টেরল যা খারাপ কোলেস্টেরল নামে পরিচিত তাকে শরীর থেকে বের করে দেয়। এমন কি এই ফাইবার বাজে কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায় এবং এথেরস্কুলেরসিসের ঝুঁকি কমে।
তাই আপনি যদি হৃদরোগ ও স্টোকের ঝুকি কমাতে চান তাহলে ঢেঁড়স আপনার খাবার মেনুতে রাখা খুবই জরুরী। সাথে সাথেই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করার মাধ্যমে আপনি এ সকল রোগ থেকে বেঁচে থাকতে পারবেন।
ত্বক ভালো রাখতে
আমরা অনেকেই ত্বকের ব্রুণ সহ অনেক সমস্যায় জর্জরিত এবং এর জন্য সমাধানও খুঁজি। আপনার সেই সমস্যা দূর করতে খুবই উপকারী ঢেড়স। ঢেড়স ত্বকের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে এবং শরীরের টিস্যু পুনরায় গঠন করতে সাহায্য করে। কেননা ঢেঁড়শে রয়েছে ভিটামিন সি, অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং ত্বক থেকে ব্রুণ দূর করতে আপনাকে সাহায্য করে।
এছাড়াও ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যাল এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে এবং আপনার কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। তাই আপনি যদি ত্বক ভালো রাখতে চান তাহলে ঢেঁড়সের বিকল্প নেই।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে
আমাদের শরীরের মধ্যে থাকা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যত বেশি থাকবে আমাদের শরীরে তত রোগ কম প্রবেশ করবে। যদি আমরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা না বাড়াতে পারি তাহলে ধীরে ধীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমার মাধ্যমে আমরা অনেক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়বো। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আমাদের ঢেঁড়স খাওয়া জরুরী।
কেননা এতে থাকে এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান যেমন কেটেচিনস এবং কুয়েরসেটিন এই উপাদানগুলো শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে এবং রোগ জীবাণুর সংক্রমণ হাওয়া থেকে বিরত রাখে। এছাড়াও রক্তের হোয়াইট ব্লাড সেল তৈরি করতে ঢেঁড়স খুবই উপকারী। কেননা এতে থাকে ভিটামিন সি যা শরীরকে বাইরে রোগ জীবাণু থেকে রক্ষা করে।
তাই আপনি যদি আপনার শরীরকে সুস্থ বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত রাখতে চান তাহলে ঢেঁড়স আপনার খাদ্যাভাসে যুক্ত করুন।
হজমে সহায়ক
আমরা যারা হজমের সমস্যায় ভুগছি তারা ঢেড়স খেতে পারেন এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। কেননা ঢেড়সে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা হজম করতে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাসের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও আপনার যদি ডায়রিয়া জনিত সমস্যায় ভুগেন তাহলে ঢেঁড়স এর জলীয় অংশ তার প্রতিরোধ করে। তাই আপনার হজম প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য খাদ্য তালিকায় আপনি ঢেঁড়স রাখতে পারেন।
বিষন্নতা দূর করতে
আপনার কি মন খারাপ? সবসময় মন মরা হয়ে থাকেন? আপনার যদি মন ভালো না থাকে সব সময় বিষন্নতা ভাব লেগেই থাকে তাহলে ঢেঁড়স আপনার জন্য খুবই উপকারী হবে। ঢেঁড়সে থাকা ফাইভার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।
এছাড়াও ঢেঁড়সের বীজে থাকা পলিফেনালস এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের শক্তি বাড়ায় এবং ক্লান্তি দূর করে। যা বিষন্নতার প্রতিরোধে কার্যকরী। তাই আপনি যদি আপনার মন সবসময় ভালো রাখতে চান তাহলে আপনাকে আপনার খাদ্যাভাসে ঢেঁড়স রাখতে হবে। এবং পাশাপাশি সঠিক চিকিৎসা এবং মানসিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা অত্যন্ত জরুরী।
দৃষ্টি ভালো রাখতে
আমাদের মধ্যে অনেকেরই দৃষ্টি জনিত সমস্যা ভুগে থাকি। ছোট বাচ্চাদের অনেকেই দৃষ্টি সমস্যা থেকে থাকে। তাই আপনি যদি দৃষ্টি ভালো রাখতে চান তাহলে আপনাকে ঢেরস খেতে হবে। কেননা ঢেঁড়সে থাকে ভিটামিন এ এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট যেমন লোটেইন ও জিয়ানফিন যা চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
বৃদ্ধ বয়সে যাদের চোখের সমস্যা থাকে যেমন ছানি সৃষ্টি হয় অনেকেরই। তাদের এই সমস্যার মূল কারণ এই পুষ্টি অবদানগুলো না থাকা। তাই আপনি যদি আপনার চোখকে ভালো রাখতে চান বৃদ্ধ বয়সে চোখ জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে আপনাকে নিয়মিত ঢেঁড়স খেতে হবে।
হাড়কে শক্ত করতে
আমাদের মধ্যে যাদের হাড় জড়িত সমস্যায় ভুগি আমরা ঢেঁড়স আমাদের খাদ্য তালিকা রাখতে পারি। কেননা হাড়কে শক্ত করতে ঢেঁড়সের ভূমিকা অপরিসীম। ঢেড়স একটি ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যা হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে, হাড়ের ক্ষয় কমাতে সাহায্য করে। আপনি যদি নিয়মিত ঢেঁড়স খান তাহলে তা আপনার হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করবে।
এবং হারের বিভিন্ন সমস্যা যেমন অস্টিওপেরোসিস এবং আর্থাইটিস এর ঝুকি কমাতে পারে। তাই আপনি যদি চান আপনার হার সুস্থ ও ভালো থাকুক। ৪০ বছরের পর আপনার হাড়ের কোন সমস্যা না হয় সব সময় যেন ভালোভাবে থাকতে পারেন। তার জন্য আপনাকে আপনার খাদ্যাভাসে নিয়মিত ঢেঁড়স রাখতে হবে।
ভ্রূণের বিকাশে
বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের জন্য ঢেঁড়স খাওয়া খুবই জরুরী। কেননা গর্ভ অবস্থায় ভ্রূণের সুস্থতার সাথে ঢেড়সের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ঢেড়সে রয়েছে প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, ফসফরাস, আইরন, জিংক, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি যা গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের মস্তিষ্ক তৈরিতে সাহায্য করে এবং মিসক্যারেজ হওয়ার ঝুঁকি কম করে।
এছাড়াও ঢেড়সে ফাইবার থাকার দরুন হজম এর সমস্যা দূর হয়। গর্ভাবস্থায় প্রায় সব মহিলাদের সাধারণ সমস্যা কোষ্ঠকাঠিন্য এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে আপনাকে ঢেঁড়স খেতে হবে।
শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে
আমাদের মধ্যে অনেকেই শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে ভুগছি। বিশেষ করে অ্যাজমার রোগীরা এ সমস্যায় বেশি ভুগছেন। তাদের জন্য ঢেড়শ একটি প্রয়োজনীয় সবজি হতে পারে। ঢেঁড়সে রয়েছে ভিটামিন সি, অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা অ্যাজমার লক্ষণ বৃদ্ধি হতে বাধা দেয়। এমন কি এজমার আক্রমণ থেকেও রক্ষা করে।
এছাড়াও ঢেড়সের বীজে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এবং পলি ফেনালস উপাদান যা শরীরের জন্য বাড়তি শক্তির যোগান দেয় এবং কোষের জন্য গ্লুকোজ কে গ্লুকোজনের পরিবর্তিত করে। সেজন্য যারা শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধ করতে যান চান তাদের খাদ্যাভাসে ঢেঁড়স থাকা খুবই জরুরী।
রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া দূর করণ
আমাদের মধ্যে যাদের রক্তস্বল্পতা রোগী রয়েছে তাদের জন্য ঢেড়স ভালো চয়েস হতে পারে। যদি আমাদের রক্তে হিমোগ্লোনের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায় তাহলে তাকে আমরা রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া বলি। এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আয়রনের অভাবের কারণে ঘটে। যেসব খাদ্যে আয়রনের পরিমাণ বেশি রয়েছে সেসব খাবার খেলে আপনি রক্তস্বল্পতা থেকে বেঁচে থাকতে পারবেন।
ঢেঁড়সে আয়রনের পরিমাণ কম রয়েছে অন্যান্য আয়রনসমৃদ্ধ খাবারের তুলনায়। কিন্তু ঢেঁড়সের ভিটামিন সি রয়েছে যা আয়রনের শোষণ বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও ঢেরসের ফাইবার রয়েছে যা পাচনতন্ত্র কে উন্নত করে এবং সাধারণত স্বাস্থ্য ভালো রাখে। সেহেতু আপনি যদি রক্তস্বল্পতা থেকে বেঁচে থাকতে চান তাহলে আপনার খাদ্যাভাসে ঢেঁড়স রাখা খুবই জরুরি।
গলগন্ড রোগ দূর করতে
আমদের মধ্যে যাদের গলগন্ডের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য ঢেড়স খুবই কার্যকরী। গলগন্ড রোগ যা থাইরয়েড গ্রন্থের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে হয়ে থাকে। এই গলগন্ড রোগ হয় আয়োডিনের অভাবে তাই যেসব খাদ্যে আয়োডিনে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে সেসব খাদ্য গলগন্ড কমাতে সাহায্য করে। যেহেতু ঢেড়স আয়োডিনের একটি ভালো উৎস।
সেহেতু আয়োডিনের অভাব পূরণ করতে ঢেঁড়স খাওয়া যেতে পারে। তবে গলগন্ড রোগের জন্য কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ঢেঁড়সের অপকারিতা
ঢেঁড়স খুবই পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এবং খুবই উপকারী সবজি। সাধারণত ঢেঁড়সে কোন অপকারিতা নেই। কেননা এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ফাইবার, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম ইত্যাদি রয়েছে। তবে ঢেঁড়স খাওয়ার কিছু সম্ভাব্য অপকারিতা রয়েছে যা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- এলার্জিঃ যাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের কারো কারো ক্ষেত্রে ঢেঁড়স খাওয়ার ফলে এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- চুলকানিঃ অনেকের শরীরে চুলকানি মতন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে ঢেঁড়স খেলে চুলকানি না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
- হজমের সমস্যাঃ সাধারণত হজম করতে ভালই উপকারী। কিন্তু যাদের হজম শক্তি কম, দুর্বল তাদের ক্ষেত্রে ঢেঁড়স হজম করতে সমস্যা হতে পারে। কেননা ঢেঁড়শ রয়েছে উচ্চ আশ। সেহেতু তাদের ক্ষেত্রে পরামর্শ থাকবে তারা যেন ঢেঁড়স বেশি পরিমানে না খায়।
- গ্যাস ও ডায়রিয়াঃ কোন কিছু অতিরিক্ত ভাল নয়। যদি ঢেড়স অতিরিক্ত পরিমাণে খেয়ে ফেলেন তাহলে আপনার গ্যাস, ডায়রিয়া, ক্যাম্প এবং অন্ত্রের প্রদাহের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আরো পড়ুনঃ কলার মোচার উপকারিতা ও অপকারিতা
সাধারণত ঢেড়স খুবই উপকারী সবজি। এটি আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগ বালাই থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুবই উপকারী। সেহেতু আমরা যদি সুস্থ জীবন ও রোগ মুক্ত জীবন চায়। তাহলে আমাদের খাদ্যাভাসে ঢেঁড়স রাখা খুবই জরুরী।
চুলের জন্য ঢেঁড়সের উপকারিতা
আমরা প্রায় সবাই চুলের যত্ন নিতে পছন্দ করি। সেজন্য আমরা বিভিন্ন শ্যাম্পু, কন্ডিশনার ব্যবহার করে থাকি কিন্তু আপনি যদি চুলকে মসৃণ ও মজবুত করতে চান, চুল থেকে খুশকি দূর করতে চান তাও সেটা প্রাকৃতিক উপায়ে তাহলে ঢেঁড়স এক্ষেত্রে বেশ কার্যকর। ঢেঁড়সের আঠালো গুণাবলী চুলের কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে।
ঢেঁড়সের রস চুলের খুশকি দূর করে এবং শুষ্ক মাথার ত্বকের যত্নে সাহায্য করে। এছাড়াও ঢেড়সে রয়েছে ভিটামিন এ, সি এবং কে এবং মিনারেলস যেমন ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও আইরন এই সকল উপাদানগুলো চুলের ফলিকল কে পুষ্টি দেওয়ার মাধ্যমে চুলের বৃদ্ধি সহায়তা করে।
চুলের যত্নে আমরা কিভাবে ঢেঁড়সের ব্যবহার করবো তার পদ্ধতি নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
প্রথম পদ্ধতিঃ
১। প্রথমত আমাদেরকে আড়াইশো গ্রাম ঢেঁড়স লম্বা করে কেটে নিতে হবে।
২। এই কেটে নেওয়া ঢেড়স এক কাপ পানির সাথে মিশিয়ে চুলাতে হালকা আচে বসাতে হবে।
৩। যখন দেখবেন ঢেঁড়সের সব রস বের হয়ে গিয়েছে এবং পানি ঠাণ্ডা হয়ে গেছে তখন চুলা বন্ধ করে দিবেন।
৪। সেই পাত্র থেকে ঢেড়সের টুকরাগুলো তুলে ফেলে দিন।
৫। পানি টি ঠান্ডা করতে দিন। ঠান্ডা হয়ে গেলে এই আঠালো অংশটি পুরো চুলে লাগিয়ে আধ ঘন্টা রাখুন। তারপর চুলে শ্যাম্পু দিন।
৬। এই কন্ডিশনার আপনার চুলর মশ্চারাইজ করবে এবং আপনার চুলের ড্যামেজ সারাবে।
দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ
১। প্রথমে আপনাকে কিছু তাজা ঢেড়স কেটে নিতে হবে এবং ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
২। সেই কেটে নেওয়া ঢেড়স গুলোকে আপনি ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে সবগুলো রস বের করে নিন।
৩। ব্লেন্ড করা রস টি সরাসরি আপনি চুলের গোড়ায় এবং চুলের উপর মালিশ করে নিন।
৪। রসটি আপনার চুলে ৩০ মিনিট পর্যন্ত রাখুন।
৫। এরপর আপনার চুলে মৃদু শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ঢেঁড়স এবং অন্যান্য উপাদান মিশ্রনঃ
- ঢেঁড়সের রসের সাথে আপনি অলিভ অয়েল এবং কিছু লেবুর রস মিশিয়ে চুলে মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
- ঢেঁড়সের সাথে নারকেল তেল মিশিয়ে চুলের গোড়ায় মালিশ করতে পারেন।
ঢেঁড়সের রসের সাথে অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদানঃ
- ঢেড়সের রসের সাথে আপনি মধু মিশিয়ে চুলে মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
- ঢেড়সের রসের সাথে আপনি ডিমের কুসুম মেশাতে পারেন। যা চুলে দিলে চুলের পুষ্টি বাড়বে।
ঢেঁড়সের রসের সাথে আয়ুর্বেদিক উপাদানঃ
- ঢেঁড়সের রসের সাথে আপনি আমলকির রস মিশিয়ে চুলের গোড়ায় মালিশ করতে পারেন।
- ঢেঁড়সের রসের সাথে ব্রাহ্মী বা বৃঙ্গরাজের পাতার রস মিশিয়ে চুলে মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
আপনার যদি চুলের কোন সমস্যা থেকে থাকে বা চুলের যত্নের বিভিন্ন উপায় খুঁজে থাকেন। তাহলে উপরে দেওয়া পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করলে আপনি ভাল ফল পাবেন।
ঢেঁড়স খেলে কি এলার্জি হয়
আমরা অনেকেই এরকম প্রশ্ন করে থাকি। আমরা ভাবি ঢেড়স খেলে হয়তো বা এলার্জি হতে পারে। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে ঢেঁড়স খেলে অ্যালার্জি হয় না। যাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এলার্জি হতে পারে। তাছাড়া ঢেড়স খুবই উপকারী এবং প্রচুর ভিটামিন সমৃদ্ধ সবজি। যা আমাদের প্রত্যেকের খাদ্যাভাসে থাকা খুবই জরুরী।
বিশেষ করে ছোট বাচ্চারা এবং বৃদ্ধদের এটা খাওয়া খুবই জরুরী। দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখতে এবং হাড় শক্ত করতে উপকারী।বিশেষ করে যাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা রয়েছে তারা যদি প্রচুর পরিমাণে ঢেঁড়স খান তাহলে তাদের ক্ষেত্রে এলার্জির উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এলার্জির উপসর্গ হিসেবে ত্বক লাল হয়ে যেতে পারে চুলকানি, নাক বন্ধ, হাঁচি, কাশি, বুক ধরঘর করা ইত্যাদি উপসর্গ অনুভব করতে পারেন।
যদি আপনি ঢেঁড়স খাওয়ার পর এমন কোন উপসর্গ অনুভব করেন তাহলে আপনাকে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিলে আপনি অ্যালার্জি থেকে বেঁচে থাকতে পারে ন। তাছাড়া আমাদের যাদের এলার্জি নেই তারা আমাদের প্রত্যাহিত খাদ্যাভাসে ঢেঁড়স রাখতে পারি। যাতে আমরা বিভিন্ন রকম রোগ থেকে বেঁচে থাকতে পারি।
নবান্ন আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url