কাঁকরোল এর উপকারিতা ও অপকারিতা
বাংলাদেশের বিভিন্ন মৌসুমে অনেক সবজি উৎপন্ন হয় যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী ও প্রচুর পুষ্টিগুণী সম্পন্ন। তেমনি কাকরোল একটি গ্রীষ্মকালীন সবজি। কাঁকরোল বাজারে খুবই সহজলভ্য।
কিন্তু কাকরোলে প্রচুর পরিমাণে উপকারিতা রয়েছে। তাই শরীরের রোগ বালাই থেকে মুক্তি পেতে গেলে আপনাকে কাকরোল খাবার তালিকায় রাখতে হবে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ
কাকরোলের পুষ্টিগুণ
বিভিন্ন পুষ্টিকর সবজির মতন কাঁকরোল খুবই পুষ্টিকর সবজি। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে। কাকরালে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট, এন্টি অক্সিডেন্ট, লুটেইন, জেনান্থিন যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। বিশেষজ্ঞরা বলেন, কাকরোল টমেটোর চেয়ে ৭০ গুণ বেশি লাইকোপেন থাকে, বিটা কেরোটিন গাজরের চেয়ে ২০ গুন বেশি থাকে এবং ভিটামিন সি থাকে ৪০ গুন বেশি কমলার চেয়ে। জিয়াজেন্থিন থাকে চল্লিশ গুণ বেশি ভুট্টার চেয়ে। কাঁকরোল এ কি কি পুষ্টিগুণ রয়েছে সে সম্পর্কে নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
প্রতি ১০০ গ্রাম কাকরোলে রয়েছেঃ
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
প্রোটিন | ৩.১ গ্রাম |
খনিজ পদার্থ | ১.১ গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ৩৩ মিলিগ্রাম |
চর্বি | ১ গ্রাম |
ভিটামিন সি | ১৩ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি | ০.৮০ মিলিগ্রাম গ্রাম |
শক্তি | ৫২ কিলো ক্যালরি |
ক্যারোটিন | ১৬২০ মাইক্রগ্রাম |
শর্করা | ৭.৭ গ্রাম |
ফসফরাস | ৪২ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ৪.৬ মিলিগ্রাম |
কাঁকরোলের উপকারিতা
কাঁকরোলের প্রচুর উপকারিতা রয়েছে। কাকরোল খেতে তেতো লাগে। অনেক মানুষ কাঁকরোল খেতে চান না। কিন্তু শরীরের বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচতে গেলে শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে গেলে কাঁকরোল খাওয়ার কোন বিকল্প নেই। সেহেতু খাওয়ার আগে আমাদের কাকরোলের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেয়া জরুরি। তাই আসুন কাকরোলের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিইঃ
কোলেস্টেরল কমাতে কাকরোল
আমাদের মধ্যে যাদের কোলেস্টেরলের সমস্যা রয়েছে তাদের সে সমস্যা দূর করতে হলে কাঁকরোল খাওয়া খুবই জরুরি। কেননা কাঁকরোলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং কম ক্যালোরি যা কোলেস্টেরল কমাতে খুবই সাহায্য করে। তাছাড়াও নিয়মিত ব্যায়াম করলেও কোলেস্টেরল কমানো সম্ভব।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাঁকরোল
ডায়াবেটিস আমাদের একটি কমন রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই রোগ ছোট থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবারই হয়ে থাকে। এই রোগ থেকে বাঁচতে হলে আমাদেরকে কাঁকরোল খেতে হবে। কেননা কাঁকরোলে রয়েছে হাইপোগ্লাইসেমিক গুনাগুন। এটি অগ্নাশয় এর বিটাসেলকে সুরক্ষিত রাখে ও পুনর্গঠনে সাহায্য করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কাকরোল খুবই কম ক্যালোরি ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার সেজন্য এটি রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এর ফলে আমরা সহজে ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পেতে পারি।
ওজন কমাতে কাকরোল
ওজন কমাতে আমরা কেই না চায় কিন্তু আসলেই কিভাবে ওজন কমানো যায় তা তো আমরা জানি না। আপনি যদি কাকরোল খান তাহলে আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। কেননা কাকরোলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। যা শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমানোর প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করে। গবেষণাতে দেখা গিয়েছে, রক্তে যদি প্রয়োজনীয় পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে তাহলে ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়া শতকরা ২৫ ভাগ পর্যন্ত বেড়ে যায়। যার ফলে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা অনেকআংশে কমে যায়। কাঁকরোল একটি কম ক্যালরিযুক্ত সবজি যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এটি ফাইভারে সমৃদ্ধ এটি খেলে আপনার মনে হবে আপনার পেট ভরে গিয়েছে ফলে দীর্ঘ সময় খুদা নিয়ন্ত্রণ থাকবে। এছাড়াও কাঁকরোলে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান থাকে। যা সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। সেহেতু ওজন কমানোর জন্য কাঁকরোলের ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু শুধু কাঁকরোল খেলেই যে আপনি ওজন কমাতে পারবেন বিষয়টা সেরকম নয়। কাকরোল খাওয়ার সাথে সাথে আপনাকে নিয়মিত ডায়েট অনুসরণ করে চলতে হবে তাহলে আপনার ওজন কমানো সম্ভব হবে।
তারুণ্য ধরে রাখতে কাকরোল
ত্বকের তারণ্যতা কেইবা ধরে রাখতে চাই না। আমরা সবাই চাই না যেন কম বয়সেই ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে শুরু করে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে গেলে আমাদেরকে কাঁকরোল খেতে হবে। কেননা, কোষের কাজকে উদ্বিপ্ত করে এবং স্ট্রেস কমানোর মাধ্যমে ত্বকের বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে ধীর করতে সাহায্য করে কাকরোল। কারণ কাঁকরোলে থাকে বিভিন্ন ধরনের ফ্লাভোনয়েড যেমন বিটা কেরোটিন, জিয়াজেন্থিন উপাদান হিসেবে কাজ করে। কাঁকরোলে রয়েছে টমেটোর চেয়ে ৭০ গুণ বেশি লাইকোপিন ও গাজরের চেয়ে 20 গুণ বেশি বিটা কেরোটিন। এই সকল উপাদান গুলো ত্বকের তারুণ্যতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। শুধু কাঁকরোল খেলেই যে ত্বকের তরলতা বজায় থাকবে তা কিন্তু নয়। খাওয়ার পাশাপাশি ত্বকের যত্ন নেয়াও জরুরী। তাহলেই ত্বকের বয়সের ছাপ পড়া থেকে বাঁচা যাবে।
অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে কাঁকরোল
অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে কাঁকরোল খুবই উপকারী। কাকরোলে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। এই আয়রন অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে অত্যন্ত জরুরি। কাঁকরোলে ভিটামিন সি এবং ফাইবারও থাকে, যা শরীরে আয়রন শোষণে সাহায্য করে এবং পাচন প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। তাছাড়া, এতে অন্যান্য পুষ্টিগুণও আছে যা সাধারণ স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক। নিয়মিত কাঁকরোল খেলে রক্তের হিমোগ্লোবিন মাত্রা বজায় রাখা সম্ভব এবং অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করা যায়।
হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাকে কমাতে কাকরোল
হার্ট অ্যাটাক বর্তমানে খুবই বেশি বেড়ে যাওয়া একটি রোগ। আমরা যদি হার্ট এটাক থেকে বাঁচতে চাই তাহলে কাকরোল খাওয়া খুবই জরুরী। কেননা গবেষণা দেখা গেছে, কাঁকরোল রয়েছে খুবই বেশি মাত্রায় লাইকোপেন আর এই লাইকোপিন শরীরে থাকার ফলেই হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমে যায়।
কেননা লাইকোপিন একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা হৃদ যন্ত্রের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে কাঁকরোলের বিকল্প নেই।
কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ প্রতিরোধে কাঁকরোল
কাঁকরোল একটি পুষ্টিকর সবজি যা বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা সহ কার্ডিওভাসকুলার রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান সমৃদ্ধ, যা হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। এছাড়াও, কাঁকরোলে ফাইবার এবং ভিটামিন সি প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং কোলেস্টেরল কমাতে সহায়ক। তবে, কাঁকরোল বা অন্য কোনো খাবার কার্ডিওভাসকুলার রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় নয়। তার সাথে সুস্থ জীবনযাপন, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং সঠিক ডায়েট অনুসরণ করাও অত্যন্ত জরুরি। আপনার ডায়েটে কাঁকরোল অন্তর্ভুক্ত করে আপনি আপনার হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা পেতে পারেন।
ফ্যাটি লিভার নিয়ন্ত্রণে
ফ্যাটি লিভার বা মেদযুক্ত যকৃত হল যখন লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমা হয়। এটি সাধারণত অ্যালকোহল বা অন্যান্য কারণে ঘটে থাকে। ফ্যাটি লিভারের প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা গুরুত্বপূর্ণ। কাকরোল বা স্পাইন গার্ড একটি পুষ্টিকর সবজি যা ফ্যাটি লিভারের নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। এটি ফাইবার সমৃদ্ধ এবং কম ক্যালরি যুক্ত, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে এবং লিভারের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়ক। তবে, ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসা বা নিয়ন্ত্রণের জন্য সঠিক পরামর্শ ও চিকিৎসা পেতে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
খুসখুসে কাশি কমাতে
খুসখুসে কাশি হল এমন এক ধরনের কাশি যেখানে কোনো কফ বা শ্লেষ্মা নির্গমণ হয় না। এটি বিরক্তিকর এবং অনেক সময় বিব্রতকর হতে পারে। এই ধরনের কাশির কারণ হতে পারে ঋতু পরিবর্তন, ভাইরাস ও অ্যালার্জি, স্প্রে ব্যবহার, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, যক্ষ্মা, অ্যাসিডিটি, ক্যানসার ও ধূমপান, হৃদরোগ, পর্যাপ্ত তরল পান না করা, মানসিক চাপ, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি।
কাকরোল এ বিভিন্ন ঔষুধি গুণ রয়েছে। খুসখুসে কাশি কমাতে কাঁকরোল ভুমিকা রাখতে পারে। তবে, খুসখুসে কাশি কমানোর জন্য সাধারণত কিছু ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করা হয়, যেমন মধু ও লেবুর রস মিশ্রিত গরম পানি পান করা, হলুদ গুঁড়া মিশ্রিত মধু পান করা, বা লেবুর শরবত পান করা। এই উপাদানগুলি প্রদাহ কমাতে এবং গলা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
হজমের সমস্যা দূর করতে
কাকরোল এর অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে যা হজমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এটি ফাইবারে সমৃদ্ধ যা পাকস্থলীর কাজকে উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। এছাড়াও, কাকরোলে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান থাকে যা পেটের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
হজমের সমস্যা দূর করার জন্য কাকরোল খাওয়ার কিছু উপায়ঃ
1. কাকরোলের স্যুপ: কাকরোল সেদ্ধ করে স্যুপ তৈরি করা যেতে পারে।
2. কাকরোলের সালাদ: কাঁচা কাকরোল কেটে সালাদে মিশিয়ে খাওয়া যায়।
3. কাকরোলের জুস: কাকরোল থেকে জুস তৈরি করে পান করা যায়।
এছাড়াও, নিয়মিত ব্যায়াম এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস হজমের সমস্যা দূর করতে অত্যন্ত জরুরি। যেমন, প্রচুর পানি পান করা, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, এবং অতিরিক্ত তেল-মশলা যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা। সবসময় স্বাস্থ্যকর খাবার এবং জীবনযাত্রার প্রতি নজর দেওয়া উচিত।
বিষন্নতা প্রতিরোধে
কাঁকরোল, যা স্পাইন গার্ড নামেও পরিচিত, তার বিভিন্ন পুষ্টিগুণ রয়েছে যা বিষন্নতা প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। কাঁকরোলে থাকা সেলেনিয়াম, মিনারেল এবং ভিটামিন নার্ভাস সিস্টেমের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে, যা বিষণ্ণতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করে।
তবে বিষন্নতা একটি জটিল মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, এবং এর চিকিৎসা বা প্রতিকারের জন্য পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার পরামর্শ নেওয়া উচিত। যদি আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ বিষন্নতায় ভুগছেন, তাহলে অবশ্যই একজন মনোবিজ্ঞানী বা মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারের সাথে কথা বলা উচিত। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রা বিষন্নতা প্রতিরোধে সাহায্য করলেও, এটি কোনো চিকিৎসা পদ্ধতির বিকল্প বলা যাবে না।
দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে
কাঁকরোল এ বিটা ক্যারোটিন এবং অন্যান্য উপাদান থাকে যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। বিটা ক্যারোটিন ভিটামিন এ-তে পরিণত হয়, যা চোখের রেটিনার জন্য ভালো এবং রাতের দৃষ্টিশক্তি এবং সাধারণ চোখের স্বাস্থ্য উন্নত করতে পারে¹। এছাড়াও, কাঁকরোলে অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যেমন ভিটামিন বি, খনিজ পদার্থ, এবং শ্বেতসার থাকে যা সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং বিশেষ করে চোখের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তবে, দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর জন্য কেবল কাঁকরোল নয়, অন্যান্য খাবার যেমন মাছ, ডিম, দুগ্ধজাত খাবার, বাদাম এবং বীজ, সাইট্রাস ফল, ডাল, গাজর, এবং সবুজ পাতাযুক্ত শাকসবজি খাওয়াও উপকারী। এই খাবারগুলো ভিটামিন এ, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এবং জিঙ্ক সমৃদ্ধ যা চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
সুস্থ জীবনযাত্রা এবং নিয়মিত চোখের যত্ন নেওয়াও দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখার জন্য জরুরি। যেমন, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া, চোখের ব্যায়াম করা, এবং দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনের সামনে থাকার পর চোখের বিশ্রাম দেওয়া। যদি আপনি দৃষ্টিশক্তির কোনো সমস্যা অনুভব করেন, তাহলে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কাকরোলের অপকারিতা
কাঁকরোল সাধারণত একটি পুষ্টিকর সবজি হিসেবে পরিচিত, যা বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ, ভিটামিন এবং ফাইবার সমৃদ্ধ। তবে, যেকোনো খাবারের মতো, কাঁকরোলেরও কিছু অপকারিতা থাকতে পারে যদি অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করা হয় বা কারো বিশেষ স্বাস্থ্য অবস্থা থাকে।
উদাহরণস্বরূপ, কাঁকরোলে অক্সালেটের মাত্রা বেশি থাকতে পারে, যা কিডনির পাথরের ঝুঁকি বাড়াতে পারে যদি কেউ অতিরিক্ত পরিমাণে এবং নিয়মিত গ্রহণ করে। এছাড়া, কাঁকরোলে থাকা কিছু উপাদান কিছু মানুষের জন্য অ্যালার্জি বা অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। তাই, যদি কারো কাঁকরোল খাওয়ার পর অস্বস্তি বা অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হয়, তাহলে তারা এই সবজি এড়িয়ে চলা উচিত।
সবসময় মনে রাখা ভালো যে, কোনো খাবারের উপকারিতা বা অপকারিতা ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হতে পারে। তাই, নিজের ডায়েট পরিকল্পনা করার সময় পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এছাড়া, যেকোনো নতুন খাবার ডায়েটে যোগ করার আগে তার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জানা এবং সেই অনুযায়ী খাবারের পরিমাণ নির্ধারণ করা জরুরি।
কাকরোলের রেসিপি
কাঁকরোল একটি জনপ্রিয় বাঙালি সবজি যা বিভিন্ন ধরনের রেসিপিতে ব্যবহৃত হয়। এখানে কাঁকরোলের কিছু রেসিপির ধারণা দেওয়া হলোঃ
একটি সাধারণ কাঁকরোল ভাজির রেসিপি দেওয়া হলো:
**উপকরণ:
- কাঁকরোল: ৫০০ গ্রাম
- হলুদ গুঁড়ো: ১ চা চামচ
- লঙ্কা গুঁড়ো: ১ চা চামচ
- নুন: স্বাদ মতো
- সরষের তেল: পরিমাণ মতো
- পেঁয়াজ কুচি: ১টি বড়
- কাঁচা লঙ্কা: ২-৩টি
- ধনেপাতা: সাজানোর জন্য
**প্রণালী:
১. প্রথমে কাঁকরোলগুলো ভালো করে ধুয়ে নিন এবং চাকতি আকারে কেটে নিন।
২. একটি পাত্রে কাঁকরোলের টুকরোগুলোর সাথে হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো এবং নুন মিশিয়ে নিন।
৩. একটি প্যানে সরষের তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি এবং কাঁচা লঙ্কা দিয়ে ভাজুন।
৪. পেঁয়াজ সোনালি হয়ে এলে মশলা মাখানো কাঁকরোলের টুকরোগুলো দিন এবং মাঝারি আঁচে ভাজুন।
৫. কাঁকরোল ভাজা হয়ে গেলে উপরে ধনেপাতা ছড়িয়ে দিন।
আরো কিছু মজাদার রেসিপি দেয়া হলোঃ
১। কাঁকরোল কারি:
- কাঁকরোলগুলিকে ভালো করে ধুয়ে গ্রেট করুন।
- গ্রেট করা কাঁকরোলের সাথে পেঁয়াজ কুচি, কাঁচা লঙ্কা কুচি, হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কার গুঁড়ো, বেসন, নুন, চিনি এবং সেদ্ধ আলু মিশিয়ে মাখুন।
.২। পুরভরা কাঁকরোল:
- একটি বড় আকারের কাঁকরোল নিন এবং তার মাঝ বরাবর চিরে নিন।
- পছন্দমতো পুর তৈরি করুন এবং কাঁকরোলের ভেতর পুর ভরুন।
.৩। কাঁকরোল ভাজা:
- কাঁকরোলগুলো ভালোভাবে ধুয়ে পাতলা স্লাইস করে নিন।
- হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, নুন এবং বেসন মিশিয়ে ভালভাবে মাখিয়ে নিন।
- তারপর গরম তেলে স্লাইসগুলি ভেজে নিন যতক্ষণ না সোনালি বাদামি হয় ততক্ষন পর্জন্ত।
৪। কাঁকরোলের ডালনা:
-প্রথমত, কাঁকরোলগুলি কেটে সেদ্ধ করে নিন।
-এখন পেঁয়াজ, আদা, রসুন এবং টমেটো দিয়ে মশলা তৈরি করে নিন।
- তারপর, সেদ্ধ কাঁকরোলগুলি মশলায় মিশিয়ে ডালনা তৈরি করুন।
৫। কাঁকরোল রেজালা:
- প্রথমত, কাঁকরোলগুলি হালকা করে ভেজে নিন।
- গোটা গরম মশলা ও শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে বাটা মশলা দিয়ে কষিয়ে নিন।
- তারপর, কাঁকরোলগুলি মশলায় মিশিয়ে ঢাকা দিয়ে রান্না করুন।
৬। কাঁকরোলের মাসালা:
- প্রথমত,কাঁকরোলগুলি ধুয়ে কেটে নিন।
- পেঁয়াজ, আদা, রসুন, টমেটো এবং মশলা দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন।
- তারপর, কাঁকরোলগুলি মশলায় মিশিয়ে ভালো করে রান্না করুন।
.৭। কাঁকরোল ভর্তা:
- প্রথমত,কাঁকরোলগুলি সেদ্ধ করে নিন।
- তারপর, সেদ্ধ কাঁকরোল, কাঁচা পেঁয়াজ, কাঁচা লঙ্কা, সরিষা তেল, নুন এবং ধনেপাতা দিয়ে ভর্তা করে নিন।
.৮। কাঁকরোলের ডাল:
- প্রথমত,কাঁকরোলগুলি কেটে সেদ্ধ করে নিন।
- মুগ ডাল বা মসুর ডাল সেদ্ধ করে নিন।
- তারপর, ডালের সাথে কাঁকরোল এবং পছন্দমতো মশলা মিশিয়ে ডাল তৈরি করে নিন।
৯। কাঁকরোলের চচ্চড়ি:
- প্রথমত,কাঁকরোলগুলি ধুয়ে কেটে নিন।
- পেঁয়াজ, আদা, রসুন, টমেটো এবং মশলা দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন।
- তারপর, কাঁকরোলগুলি মশলায় মিশিয়ে ভালো করে রান্না করুন।
১০। কাঁকরোলের পাকোড়া:
- প্রথমত,কাঁকরোলগুলি ধুয়ে পাতলা স্লাইস করে নিন।
- বেসন, হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, নুন এবং পানি দিয়ে একটি ব্যাটার তৈরি করে নিন।
- তারপর, কাঁকরোলের স্লাইসগুলি ব্যাটারে ডুবিয়ে গরম তেলে ভেজে নিন।
১১। কাঁকরোলের কোফতা:
- প্রথমত,কাঁকরোলগুলি ধুয়ে কুচি করে নিন।
- কুচি করা কাঁকরোল, আলু, বেসন, মশলা মিশিয়ে কোফতা তৈরি করে নিন।
- তারপর, কোফতাগুলি ভেজে নিয়ে টমেটো ও মশলার গ্রেভিতে দিন।
এই রেসিপিগুলি বাঙালি রান্নার ঐতিহ্যবাহী স্বাদ এবং সুগন্ধ নিয়ে আসে।
নবান্ন আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url